পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

241 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড দাঁড়াইয়াছেন। এখানে প্রশ্ন ব্যক্তির নহে এখানে প্রশ্ন হইল আদর্শ ও কর্মসূচীর, জনগণের নিকটও ব্যক্তির চাইতে আদর্শ ও কর্মসূচীর প্রশ্নই বড় প্রশ্ন। তাই, দেখা যাইতেছে যে, মরহুম ফজলুল হক, সোহরাওয়াদী প্রমুখের নেতৃত্বে পরিচালিত যুক্তফ্রন্টের আহবানে জনগণ যেরূপ সাড়া দিয়াছিলেন, আজও সম্মিলিত বিরোধী দলের আহবানে জনগণ সাড়া দিয়াছেন। সম্মিলিত বিরোধী দলের সপক্ষে এই গণজাগরণ দেখিয়া জনাব আইয়ুব খাঁ একেবারে বে-সামাল হইয়া পড়িয়াছেন। অন্য কোন পথ না পাইয়া তিনি এখন সম্মিলিত বিরোধীদল জয়ী হইলে আবার সামরিক শাসন জারির হুমকি পর্যন্ত প্রদর্শন করিতেছেন। কিন্তু দেশের জনগণ জানেন যে, কঠোর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়াই গণতন্ত্রের সংগ্রাম জয়ী হইবে। কোন হুমকি জনগণকে গণতন্ত্রের সংগ্রাম হইতে বিচু্যত করিতে পরিবে না। সম্মিলিত বিরোধী দলের দাবী জনাব আইয়ুব খাঁর একনায়কত্বের অধীনে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হইয়াছে, ভোটাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা কাড়িয়া নেওয়া হইয়াছে। জাতিসমূহের স্বায়ত্বশাসন পদদলিত হইয়াছে এবং দেশপ্রেমিক কর্মীগণ কারাগারে পচিতেছেন। এই একনায়কত্বের অধীনে সারা দেশে গোটা কয়েক ধনিক পরিবার ও অন্যান্য কায়েমী স্বার্থবাদীদের শোষণের রাজত্ব গড়িয়া উঠিয়াছে। এই একনায়কত্বের অধীনে মার্কিনী ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি দেশের ধন-সম্পদ লুট করিয়া নিয়া যাইতেছে এবং আমাদের দেশ এখনও সিটো ও সেন্টোর অন্তর্ভুক্ত রহিয়াছে। এই একনায়কত্বের অধীনে সুবিধা হইয়াছে শুধু দেশী ও বিদেশী শোষকদের। জনগণের ভাগ্যে জুটিয়াছে শুধু জুলুম, নিপীড়ন, অনটন ও উপবাস। স্বাধীন দেশের নাগরিক হইয়াও দেশের জনগণ জনাব আইয়ুব খাঁর শাসনে সব অধিকার হারাইয়াছে। এই অসহ্য অবস্থার প্রতিকারের জন্য নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধীদল একনায়কত্বের অবসান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবী বুলন্দ কষ্ঠে উত্থাপিত করিয়াছে। সম্মিলিত বিরোধীদল’ আরও দাবী করিয়াছে যে, (১) জনগণের ভোটাধিকার ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে পার্লামেন্টারী শাসন প্রবর্তিত হোক; (২) জনগণের পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃত হোক; (৩) সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হোক; (৪) সমস্ত দমনমূলক আইন নাকচ করা হোক; (৫) খাজনা-ট্যাক্স কমান হোক এবং (৬) দুনীতি উচ্ছেদ করা হোক ইত্যাদি। সম্মিলিত বিরোধী দলের পক্ষ হইতে দেশবরেণ্য মিস ফাতেমা জিন্নাহ আজ প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসাবে জনগণের সামনে উপস্থিত হইয়াছেন। সম্মিলিত বিরোধীদলের মূল কথাই হইল যে, দেশের প্রগতির জন্য আজ সর্বপ্রথম প্রয়োজন হইল জুলুমবাজ একনায়কত্বের অবসান করা এবং পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিয়া জনগণের হৃত অধিকারগুলি ফিরাইয়া দেওয়া এবং জনগণের হাতে দেশের সরকার গঠনের দায়িত্ব দেওয়া। সম্মিলিত বিরোধীদল’ জনগণের এই মৌলিক অধিকারের দাবীই উত্থাপন করিয়াছে। তাই দেশের জনগণের নিকট আমাদের আবেদন একনায়কত্ব অবসানের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের অধিকারগুলি ফিরিয়া পাইবার জন্য আপনাদের দুর্দশা লাঘব করিবার জন্য মিস জিন্নাহকে জয়যুক্ত করুন।