পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

264 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণ আমরা একথা বলিতে পারি না যে, একটা দেশের মধ্যে যেমন একদল বঞ্চিত ও একদল বিত্তশালী রহিয়াছে তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাষ্ট্র সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করিয়াছে। সর্বপেক্ষা ধনী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইহার তাঁবেদার রাষ্ট্রগুলি সহ একটি নূতন ধরনের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়িয়া তুলিয়াছে। যুক্তরাষ্ট্র, অর্থ ও ক্ষমতার উপর তাহার একচেটিয়া অধিকার কায়েম রাখার জন্য, মনুষ্য জাতির উপর একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চাপাইয়া দেওয়ার চেষ্টা করিতেছে। ভিয়েৎনামে যুদ্ধ সম্প্রসারণ, চীনের বিরুদ্ধে নয়া মোকাবেলা, ভারতকে দ্রুত অস্ত্রসজ্জিতকরণ, সেন্টো ও সিয়েটো ধরনের সংস্থা গঠনের নয়া প্রচেষ্টা- এইসব কিছুই ঐ অভিসন্থি নির্দেশ করে। পাকিস্তান সম্প্রতি উহার বাণিজ্যিকে বহুমুখী করার এবং চীন, সোভিয়েথ ইউনিয়ন, অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও আফ্রো-এশীয়-লাতিন আমেরিকান রাষ্ট্রগুলির সহিত সম্পক উন্নয়নের চেষ্টা করিতেছে; কিন্তু আমরা এখনও সেন্টো-সিয়োটা হইতে বাহির হইয়া আসি নাই। এবং এখনও আমাদের দেশে মার্কিন সরকারের ঘাঁটি বিদ্যমান রহিয়াছে। বিদেশী পুঁজিপতিদের শোষণ, ইহারা আমাদের দেশের পুঁজিপতিদের মধ্যে উৎসুক মিত্র খুঁজিয়া পায়, বর্তমানে এক নতুন রূপ পরিগ্রহ করিতেছে। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার জন্য পূবাহ্নে প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য করিয়া যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করিতেছে। পাকিস্তানের পুঁজিপতি ও আমলাতন্ত্রীরা এই সকল ব্যাপরে গভীর উৎকণ্ঠিত এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থ আর একবার বিক্রয় করিবার হুমকি দিতেছে। ইহাকে প্রতিহত করার জন্য জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে এবং আমাদের পরিকল্পনাবিদদের অবশ্যই আমাদের জাতীয় সম্পদের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করিতে হইবে। আমাদের ত্যাগ স্বীকার এবং নূতন উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলিকে রাষ্ট্ৰীয় খাতে স্থানান্তরকরণ মার্কিনী হুমকীর প্রতিক্রিয়াকে আংশিকভাবে ঠেকাইতে সক্ষম হইবে। সঠিকভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ নীতি ও কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য অবশ্যই আমাদের শত্রদের অবস্থান, তাহাদের বর্তমান রণনীতি ও কৌশল সম্পকে অবহিত হইতে হইবে। আমরা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, সাম্রাজ্যবাদই আমাদের প্রধান শত্র আর তাই, তাহাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সাম্রাজ্যবাদ কি রণনীতি ও কৌশল গ্রহণ করিতেছে সে সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল থাকিতে হইবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত কয়েক বৎসর এশিয়া ও আফ্রিকায় বহু স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হইয়াছে। এই সকল নূতন স্বাধীন রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক দেশের সহয়াতায় অনেকটা স্বাধীন অর্থনীতি গড়িয়া তুলিতেছে। কিছু ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র মুক্তি অর্জনের জন্য সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতেছে। বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি ইতিমধ্যেই সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সহিত এক তীব্র অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হইয়াছে। এই সবই পুঁজিবাদের সাধারণ সংকটকে গভীরতর করিতেছে এবং পুঁজিবাদী দেশগুলির মধ্যেকার বিরোধকে তীব্রতর করিয়া তুলিতেছে। এই অবস্থা হইতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা, মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী চক্র, বারবার যুদ্ধোন্মদনাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ধৃত প্ররোচনার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে এবং এখনও করিতেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ভিয়েতনামে নিয়মিত যুদ্ধ শুরু করিয়াছে। তাহারা লাওসে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করিতেছে এবং কম্বোডিয়াকে হুমকি প্রদান করিতেছে। দক্ষিণ ভিয়েতনামে বারংবার নাজেহাল হইয়া তাহারা মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে। তাহারা যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করিতে চায়। তাহদের লক্ষ্য হইতেছে চীন। চীনা ভূখন্ডের উপর সাম্প্রতিককালে মার্কিন বিমানের বেআইনী উড্ডয়ন ইহার একটি জুলন্ত প্রমাণ। এ ব্যাপারে ভারতের বর্তমান শাসকশ্রেণী যুক্তরাষ্ট্রের সহিত হাত মিলাইয়াছে। নেফা কে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সামরিক দিক দিয়া পূর্ব পাকিস্তানের গুরুত্ব সমধিক। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের দৃষ্টি পূর্ব পাকিস্তানের উপর পতিত হওয়ার কথা। অধিকন্তু, যখনই সম্ভব সাম্রাজ্যবাদীরা সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দকে ব্যবহার করিতে চেষ্টা করে। তাহার বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয় ও উপজাতীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের প্ররোচণা দেয় এবং বিভিন্ন রাজনীতিককে পরস্পরের