পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

278 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৭ই জুনের হরতালঃ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের | দৈনিক ইত্তেফাক ৮জুন,১৯৬৬ গুলিতে ১০ জন নিহতঃ সরকারী প্রেসনোট ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত (সরকারী প্রেসনেট) ঢাকা ৭ই জুন, আওয়ামী লীগ কর্তৃক আহুত হরতাল ৭-৬-১৯৬৬ তারিখে অতি প্রত্যুষ হইতে পথচারী ও যানবাহনের ব্যাপক ধার সৃষ্টির মাধ্যমে সংগঠিত করা হয়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছোকরা ও গুন্ডাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়। ইপিআরটিসি বাসগুলিতে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় এবং টায়ারের পাম্প ছাড়িয়া দিয়া সর্বপ্রকার যানবাহনের অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। নিরীহ জনসাধারণ ও অফিস যাত্রীদের অপমান ও হয়রানী করা হয়। হাইকোর্টের সম্মুখে তিনটি গাড়ী পোড়াইয়া দেওয়া হয়। পুলিশ কার্জন হল, বাহাদুর শাহ পার্ক ও কাওরান বাজার নিকট গুন্ডাদের বাধা দান করে এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করিয়া তাহদেরকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। তেজগাঁও দুই-ডাউন চট্টগ্রম মেইল তেজগাঁও রেল ষ্টেশনের আউটার সিগন্যালে আটক করিয়া লাইনচ্যুত করা হয়। ট্রেনখানা প্রহরা দানের জন্য একদল পুলিশ তথায় গমন করে। জনতা তাদের ঘিরিয়া ফেলে এবং তুমূলভাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, ফলে বহু পুলিশ কর্মচারী আহত হয়। যখন পুলিশ জনতার কবলে পড়িয়া যবার উপক্রম হয় তখন আত্মরক্ষার জন্য তাহার গুলি বর্ষণ করে। ফলে ৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নারায়ণগঞ্জের এক উচ্ছঙ্খল জনতা সকাল ৬-৩০ মিনিটের সময় গলাচিপা রেলওয়ে ক্রসিং-এর নিকট ঢাকাগামী ট্রেন আটক করে। পরে জনতা নারায়ণগঞ্জগামী ৩৪নং ডাউন ট্রেন আটকাইয়া উহার বিপুল ক্ষতি সাধন ও ড্রাইভারকে প্রহার করে। জনতা জোর করিয়া যাত্রীদের নামাইয়া দেয়। যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য আগত একটি পুলিশ দল আক্রান্ত এবং বহুসংখ্যক পুলিশ কর্মচারী আহত হয়। পুলিশ দল লাঠিচার্জের সাহায্যে জনতা ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। অতঃপর বন্দুকসহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে এক জনতা নারায়ণগঞ্জ থানা আক্রমণ করিয়া দারুন ক্ষতি এবং বন্দুকের গুলীতে পুলিশ অফিসারদের জখম করে। উচ্ছঙ্খল জনতা থানা ভবনে প্রবেশ করার পর পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করার ফলে ছয় ব্যক্তি নিহত ও আরও ১৩ ব্যক্তি আহত হয়। ৪৫জন পুলিশ আহত হন এবং তাহদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর।....... টঙ্গীতে বিভিন্ন মিলের শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে এবং একটি মিছিল বাহির করে।............... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর ছাত্র পিকেটিং করে এবং সেখানে আংশিক ধর্মঘট পালিত হয়। দুপুরে আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ডেমরা এলাকার শ্রমিকগণ ১৪৪ ধারা লংঘন করিয়া শোভাযাত্রাসহকারে ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হইতে থাকে। ঢাকা নগরীর দুই মাইল দূরে ইপিআর বাহিনীর একটি দল শোভাযাত্রার গতিরোধ করে। অপরাহ্নে এক জনতা গেন্ডারিয়ার নিকট একখানি ট্রেন আটক করে, চট্টগ্রামগামী গ্রীনএ্যারো ও ঢাকা অভিমুখী ৩৩-আপ ট্রেনখানিকে অপরাহ্নের দিকে তেজগাঁও ষ্টেশনে আটক করা হয় |............. সন্ধ্যার পর একটি উচ্ছশুঙ্খল জনতা কালেক্টরেট ও পরে ষ্টেট ব্যাঙ্ক আক্রমন করে। রক্ষীগন জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলিবর্ষণ করে। বেলা ১১ টায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্র সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করিয়া হয় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরে অন্যান্য স্থানে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল।