পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

462 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড (৫) দেশের উত্তরাঞ্চলের সহিত পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হইবে। (৬) বিপ্লবের পর প্রধান যানবাহন শিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হইবে এবং লাভেও নয়-লোকসানেও নয়’ এই নীতির ভিত্তিতে উক্ত শিল্প পরিচালিত হইবে। যে সমস্ত ক্ষুদ্র যানবাহন বিপ্লবের প্রথম অবস্থায় রাষ্ট্রয়াত্ত করা সম্ভব হইবে না, তাহার ভাড়ার হার হ্রাস করা হইবে। জনগণতান্ত্রিক শিক্ষা-সংস্কৃতি রুপরেখা জনগণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হইবে নিম্নরুপঃ (১) বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করিয়া এমনভাবে ঢালিয়া সাজানো হইবে, যাহাতে ইহা সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুঁজির সেবাদাসে পরিণত না করিয়া সৃষ্টি করিবে দেশকর্মী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞান কর্মী, কারিগরি ও উৎপাদনে অংশগ্রহণকারী দক্ষ শ্রমিক বাহিনী। এই শিক্ষাব্যবস্থা হইবে এমনি যাহা তরুণ শিক্ষার্থীদের তাহদের স্বদেশভূমি ও পৃথিবীর সকল নিপীড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের সহিত পরিচিত ও একাত্ম করিবে, দেশমাতৃকা ও তাহার জনগণের বিশেষ করিয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সঞ্চার করিবে সুগভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা, যাহা সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুঁজিপতি ও তাহদের দালালদের প্রতিও সৃষ্টি করিবে অপরিসীম ঘৃণা। এই শিক্ষা ব্যবস্থাই হইবে জনগণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাই হইবেই জনগণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা যাহার মাধ্যমে ছাত্রসমাজের মন সাম্প্রদায়িকতা ও সকল প্রতিক্রিয়াশীল ভাবাদর্শের বিষবাষ্প হইতে মুক্ত হইবে। তাহারা উদ্বুদ্ধ হইবে বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে। (২) পূর্ব বাংলার বুক হইতে নিরক্ষরতার অভিশাপকে চিরতরে নির্মুল করা হইবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করার জন্য গণশিক্ষার প্রসার করা হইবে। উক্ত শিক্ষা মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর সন্তানসন্ততির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হইবে না-ইহার সুযোগ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত রাখা হইবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত হইবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার তারতম্য যথা-কিন্ডারগার্টেন, পাবলিক স্কুল প্রভৃতি বিলুপ্ত করা হইবে। (৩) মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্রীয় খরচে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হইবে। শ্রমিককৃষকের সন্তান-সন্তুতির উচ্চ শিক্ষা প্রদানের জন্য রাষ্ট্র পর্যাপ্ত স্কলারশীপের ব্যবস্থা করিবে। (৪) প্রচলিত শিক্ষা সিলেবাসকে জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও কর্মসূচীর সহিত সঙ্গতি বিধান করিয়া পরিবর্তন করা হইবে। অনাবশ্যক সিলেবাসের বোঝা কমানো হইবে এবং ঘন ঘন সিলেবাস পরিবর্তন রদ করা হইবে। বর্তমানে পরীক্ষাসমূহের পদ্ধতিরও সংস্কারসাধন করা হইবে। (৫) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নয়নের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হইবে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী গবেষণা কাৰ্য্য পরিচালনার জন্য প্রতিটি নাগরিককে অবাধ সুযোগ প্রদান করা হইবে। প্রতিটি জেলায় অন্ততঃপক্ষে একটি করিয়া মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, প্রতিটি থানায় অন্ততঃপক্ষে একটি করিয়া কৃষি কলেজ, টেকনিক্যাল, পলিটেকনিক্যাল, উইভিং, ভেটেরিনারী কলেজ স্থাপন করা হইবে। (৬) বিভিন্ন কল-কারখানার মেকানিক, যানবাহন চালনা, দর্জির কাজ, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অপারেটর, রেডিও মেকানিজম, সিনেমা শিল্পের কারিগর প্রভৃতি শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তোলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোলা হইবে।