পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

471 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ : নীতি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ১লা আগষ্ট, ১৯৬৯ {8 কর্মসূচী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নীতি ও কর্মসূচীর ঘোষণা (ম্যানিফেষ্টো) তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৬৪ সনের মার্চ, ১৯৬৬ সনের মার্চ ও ১৯৬৭ সনের আগষ্ট মাসে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনসমূহ গৃহীত সংশোধনীনিচয় অন্তভুক্ত করিয়া এই নীতি ও কর্মসূচীর ঘোষণা (ম্যানিফেষ্টো) তৃতীয় প্রকাশরুপে পুর্নমুদ্রণ করা হইল। ভমিকা డి স্বাধীন ও সার্বভৌম পাকিস্তান কায়েম করা হয় এই উদ্দেশ্যে যে, এখানে সুবিচার ও ন্যায়নীতিভিত্তিক এক নূতন সমাজ ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা হইবে-যেখানে জনগণের জীবনযাত্রার সর্বাঙ্গণ মানোন্নয়নের মাধ্যমে এক সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল সমাজ গড়িয়া উঠিবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত করা হয় এই আশায় যে, এখানে দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের বা কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত না হইয়া দেশের সমগ্র জণসাধারণের মধ্যে সমভাবে বন্টিত হইবে, তাহাদের সর্বাত্মক কল্যাণ ব্যয়িত হইবে। স্বভাবতঃই আশা করা গিয়াছিল যে, এখানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সহজ, সুন্দর ও স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের নূ্যনতম শর্তাবলী পূরণের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা হইবে। পাকিস্তানের নাগরিকেরা অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গতভাবেই আশা করিয়াছিল চিন্তার ও চিন্তাধারা প্রকাশের পূর্ণ ও নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা, পাক স্বাধীনতা, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা, মুদ্রণ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরার স্বাধীতা এবং অন্যান্য মৌলিক স্বাধীনতার পূর্ণ নিশ্চয়তা; আশা করা গিয়াছিল অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও জনগণের ভোগের সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা। কিন্তু দেশবাসী মর্মান্তিকভাবে হতাশ হইয়াছে, -তাহদের আশা পূর্ণ হয় নাই, তাহারা এই সকল মৌলিক অধিকার ভোগের অধিকার পায় নাই। জনগণের এইসব অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও উপভোগের জন্য যে সুস্পষ্ট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার প্রয়োজন সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা এ দেশে কার্যকরী করার সুযোগ দেওয়া হয় নাই। ক্ষমতা লোভী একদল চক্রান্তকারী, এক সংকীর্ণ আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠী এবং স্বার্থসর্বস্ব একটি সামন্তবাদী ও পুঁজিবাদী শ্রেণী সম্মিলিতভাবে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলনের প্রতিটি প্রচেষ্ঠা বানচাল করিয়া দিয়াছে। এই স্বার্থপর কুচক্রীদলের দেশ ও গণস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের নজিরের অভাব নাই। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী সাহেব যখন তাঁহার স্বল্পকালস্থায়ী প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে এ দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ করিয়াছিলেন, ঠিক সেই মুহুর্তে তাঁহাকে পদত্যাগ করিতে বাধ্য করা হইয়াছিল।