পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

610 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড মোগল বাদশাদের বাগানবাড়ীর অধিবাসী এবং তাহার আশেপাশের অধিবাসীরা সাড়া না দেয়, তবে আইন বিজ্ঞানের শেষ বিধান (সেংশন) অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই উভয় অঞ্চলের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাবে। যাতে উভয় পক্ষেরই সমূহ ক্ষতি হবে। একদল ভন্ড প্রগতিবাদী আছেন, যারা আফ্রো-এশিয়ার সর্বহারার সংগ্রাম নিয়ে এতই ব্যস্ত যে, পূর্ব পাকিস্তানের সর্বহারাদের কথা চিন্তা করার সময়ই পান না। তারা ধুয়া তুলবেন পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ তো আর কোন অপরাধ করে নাই। তবে আলাদা হব কেন? এক শ্রেণীর মোল্লারাও হয়ত এই জাতের প্রশ্ন উঠাবেন। তার একমাত্র উত্তর, একটা দেশের নেতৃত্ব নেতারাই দেয়ঃ জনসাধারণ নহে। ভিয়েতনামীদের বিরুদ্ধে যে সকল আমেরিকান সৈন্য যুদ্ধ করছে, তারাও সর্বহারা। কিন্তু তারা নির্বিবাদে তাদের পুঁজিবাদী নেতাদের হুকুম মেনে, ভিয়েতনামী সর্বহারাগণকে কতল করে যাচ্ছে। সর্বহারাদের মঙ্গলকামী চীন ও রাশিয়া পরস্পর সুসংলগ্ন দুটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। তবুও উভয়ে,& কেটি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে, নিজ নিজ দেশের নেতাদের নেতৃত্বে দিবারাত্ৰি কলহ করে চলছে। একই ভাষা, একই জাতীয়তা, একই ধর্ম তথা একই আল্লা-রসুলের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও মধ্য-প্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলোর নিজ নিজ দেশের নেতাদের নেতৃত্বে অহরহ কলহ করে চলেছে অনেকে হয়তো বলবেন, আমাদের খনিজ দ্রব্য নেই। আমরা চলব কি করে? ইহাও ভুল ধারণা। একটা দেশের শক্তি তার খজিন দ্রব্যের উপর নির্ভর করে না। বরং তার অর্থনীতির উপর নির্ভর করে। জাপানেও খনিজ দ্রব্য নাই। কিন্তু জাপান একটি বিশ্বশক্তি। এদিক দিয়ে জাপান ও পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি একই ধরনের। অর্থাৎ খনিজ দ্রব্য বিহীন অর্থনীতি। হাতে পয়সা থাকলে, খনিজ দ্রব্য কেন? এটম বোমা পর্যন্ত খরিদ করা যায়। আশা করি সকলেই এখন ইহা বুঝতে পেরেছেন যে, সাকুল্য দেনা-পাওনা পরিস্কার করে, আপোষে আলাদা হয়ে যাওয়ার মধ্যেই পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের সমৃদ্ধি, মুক্তি এবং ইসলামের বৃহত্তমম সংহতি নিহিত। ○ ○ ○ ○ আমরা আমাদের মুজাহিদ সংঘের তরফ থেকে গত ২০শে মাঘ, ১৩৭৫ বাংলা, মোতাবেক ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ ইংরেজী হতে দ্ব্যর্থহীনভাবে এই আলাদা হওয়ার আন্দোলন আরম্ভ করি। আন্দোলনের অংশ হিসাবেআলাদা হওয়াই মুক্তির পথ’ নামে একটি পুস্তিকা লিখা হয়। যাহা সরকার সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বায়েজাপ্ত করেছে এবং সরকারপক্ষ হেরে যাবে বরে, ঐ বাজেয়াপ্তির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপীলের শুনানী দিচ্ছে না। আমরা এই আন্দোলনের পরের ধাপে গত ২৪শে ফালগু, ১৩৭৬ বাংলা, মোতাবেক ৮ই মার্চ, ১৯৭০ইং তারিখে আমাদের সংঘের তরফ থেকে, ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক তথা বাহাদুর শাহ পার্কে একটি জনসভার আয়োজন করি। ঐ জনসভায়ও আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে আলাদা হওয়ার তথা স্বাধীন পুর্ব পাকিস্তান গঠন করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করি। যার ফলে সংঘের আহবায়ককে সামরিক কর্তৃপক্ষ ওয়ারেন্ট মারফৎ ডেকে পাঠায়। সাক্ষাৎ হলে পরে আহবায়কের সংগে অভদ্র আচরণ করে। তাহাকে ভয় দেখায়। নানাভাবে ভয় দেখিয়ে ইংলিশ-উর্দুতে কথা বলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। সংঘের আহবায়ককে ভীতসন্ত্রস্ত করতে অপরাগ হওয়ায় মুখ রক্ষার খাতিরে তাহাকে কেবল ওয়ার্নিং দিয়েই সামরিক কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেয়। আশ্চর্যের বিষয় আহবায়কের নির্ভীক আচরণ দেখে, সামরিক কর্তৃপক্ষ আর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করার সাহস পায় নাই। বরং অন্যান্য বিষয় নিয়ে সারাক্ষণ আলোচনা করে। যাহা হউক আমাদের জনসভার প্রায় ৮ (আট) মাস পরে ৪/১১/৭০ইং তারিখে ভাসানী ন্যাপ ও অন্যান্য কয়েকটি দল পল্টনের এক জনসভায় অনুরূপ প্রস্তাব পাশ করেছে। ভাসানী সাহেব আরো ঘোষণা করেছেন,