পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

757 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ইয়াহিয়া-মুজিবের আপোষের কোন প্রশ্নই উঠতে | দৈনিক পূর্বদেশ ১৮ মার্চ, ১৯৭১ পারে না বলে মওলানা ভাষানীর ঘোষণা (পূৰ্বদেশ প্রতিনিধি) চট্টগ্রাম, ১৭ই মার্চ- ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আজ এখানে বলেনে যে, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এ ধরনের ঘোষণা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে কোনরূপ মতনৈক্য থাকতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। ন্যাপ প্রধান বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং শেখ মুজিবের মধ্যে আপোসের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। স্বাধীনতা সম্পর্কে তাঁর (মওলানার) এবং শেখ মুজিবের মধ্যে পরিস্কার কোন বোঝাপড়া রয়েছে কিনা এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব কিছুই সাংবাদিকদের কাছে বলা যায় না। অনেক কিছু রাজনীতিকদের নিজেদের কাছে গোপন থাকে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এখন সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাহীন। এখন সব ক্ষমতা জনসাধারণ ও তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। মাওলানা বলেন, ইয়াহিয়া এখন যা করতে পারেন তা হলো একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা। তার কাজ হবে দু'অংশের মধ্যে সম্পদ ও দায়ের হিসেব করা এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে তা দু'অংশের মধ্যে বন্টন করে দেয়া। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রধান বলেন যে, দেশের দুই অংশের দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত জনাব ভূট্টোর সুপারিশ তাঁকে (ভূট্টো) আরো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। আজ সকালে এখানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ প্রসংগে মওলানা ভাসানী বলেন, তাঁর জীবনের ৮৯ বছর যাবৎ তিনি বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু একটি সার্বজনীন দাবীতে জনগণের মধ্যে বর্তমান সময়ের মত একতা এবং সহযোগিতা কোনদিন দেখেননি। মওলানা ভাসানী বলেন প্রথমে প্রধান ইসু সম্পর্কে মীমাংসা করতে হবে। পরে যদি দেখা যায় যে, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব হয়নি তখন তিনি আবার সংগ্রাম শুরু করবেন। ন্যাপ প্রধান বলেন, “আমি সাম্যবাদ, লেনিনবাদ এবং মাওবাদ সম্পর্কে কিছু বুঝি না। মার্ক্সের ‘ক্যাপিটাল বইও আমি পড়িনি তবে আমি একথা ভাল করে বুঝি যে আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক না খেয়ে রয়েছে।” মওলানা ভাসানী বলেন, দেশ ত্যাগ হওয়ার পরেও যারা এখানে এসেছেন তাদের এখানে থাকার অধিকার রয়েছে, কারণ এদেশের জন্য তারা সংগ্রাম এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। রিলিফের টাকা ঠিকমত এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিলি হয় কিনা সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখার জন্যে তিনি শেখ মুজিবের প্রতি আহবান জানান। আওয়ামী লীগ রিলিফ তহবিলে অকাতরে দান করার জন্যেও তিনি জনগণের প্রতি আহবান জানান।