পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৯৬

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ কুমিল্লা-নোয়াখালী-ঢাকা

শিরোনাম উৎস তারিখ
৩। ৪র্থ বেঙ্গল ও অন্যান্য বাহিনীর কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা জেলায় সশস্ত্র প্রতিরোধ সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ১৯৭৪-১৯৭৫[১] ১৯৭১

 ১৯শে মার্চ ১৯৭১ আমাকে ঢাকা সেনানিবাস থেকে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের হেড অফিস কুমিল্লাতে বদলী করা হয়। আমি ২২শে মার্চ আমার পরিবারকে ঢাকার ধানমণ্ডিতে রেখে কুমিল্লা চলে যাই। এবং সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টে গিয়ে যোগদান করি। ইউনিটে পৌঁছার সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম আমার সৈনিকরা বেশ উদ্বিগ্ন। আরো জানতে পারলাম পাঞ্জাবীদের কমাণ্ডো এবং গোলন্দাজ আর্টিলারি বাহিনী বেঙ্গল রেজিমেণ্টের চতুর্দিকে পরিখা খনন করে মেশিনগান লাগিয়ে অবস্থান নিয়েছে। নির্দেশ পেলেই সবাইকে হত্যা করবে। পাঞ্জাবীরা সেনানিবাস রক্ষার অজুহাতে এসব পরিকল্পনা নিয়েছে। পাঞ্জাবীদের কার্যাবলীতে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সৈনিকদের মনে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছিল। আমি পৌঁছাবার সঙ্গে সঙ্গে তারা জানতে চায় এখন তাদের কি কর্তব্য? আমি সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে এবং আত্মরক্ষার্থে প্রহরী দ্বিগুন করার নির্দেশ দিয়ে তাদের শান্ত করি। পরের দিনে ২৩শে মার্চ ছুটির দিন ছিল। ২৪শে মার্চ সকাল ৭টায় আমি প্রথম অফিসে রিপোর্ট করি লেফট্যাণ্ট কর্নেল খিজির হায়াত খানের কাছে। তিনি চতুর্থ বেঙ্গল কমাণ্ডিং অফিসার ছিলেন এবং পাঞ্জাবী ছিলেন। লেফট্যাণ্ট কর্নেল খিজির হায়াত খান আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে আমার পোষ্টিংয়ে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। এবং ইউনিট সম্বন্ধে নানা বিষয়ে আলাপ আলোচনা করলেন। ঐদিনই আমি যখন আমার অফিসে সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড উপ-প্রধানের কাজ বুঝে নিচ্ছিলাম সকাল প্রায় সাড়ে দশটায় তখন খিজির হায়াত খান ডেকে পাঠালেন। আমি অফিসের ভিতর ঢুকে দেখি খিজির হায়াত খান উদ্বিগ্ন। তিনি আমাকে বসার জন্য বললেন এবং জানান যে আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়ীত্ব নিয়ে আজই কুমিল্লা থেকে রওনা হতে হবে। আমি উত্তর দিলাম যে হুকুম যদি হয় আমি নিশ্চয়ই যাব। তবে আমি একদিন হয় এসেছি এবং আমার দায়ীত্ব কেবল বুঝে নিচ্ছি, এমতাবস্থায় ইউনিটি থেকে অন্য যায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়তো আপনার পক্ষে ভুল হবে। তাকে আরো বুঝাতে চেষ্টা করলাম ব্যাটালিয়ানে আরো অফিসার আছে, তাদেরকেও পাঠানো যেতে পারে। তাছাড়া ইউনিটি প্রধানকে সাধারনতঃ এভাবে পাঠানো হয় না। আমার বক্তব্য শুনে তিনি বললেন ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ন সে জন্য তোমাকেই যেতে হবে। আমি যানতে চাইলাম আমাকে কি ধরনের দায়ীত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। কর্নেল খিজির হায়াত খান বললেন যে খবর এসেছে সিলেটের সমসের নগর নামক জায়গায় নক্সালপন্থীরা বিশেষ তৎপর রয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করছে আরো খবর আছে ভারত থেকে বেশ অনুপ্রোবেশও হচ্ছে। এই সব কারনে আমাকে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের একটা কোম্পানী নিয়ে সেখানে যেতে হবে। এবং তাদের দমন করতে হবে। আমি জবাব দিলাম একটা কোম্পানী যখন যাবে তখন কোন জুনিয়র মেজরকে সেখানে পাঠানো যেতে পারে। সাধারণত উপ-প্রধান একটা কোম্পানী নিয়ে কখনও যায় না। আমার বক্তব্য খিজির হায়াত খান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এবং আমাকে বললেন, ঠিক আছে আপনি যান এবং আমি আপনাকে একটু পরে ডেকে পাঠাব। কিছুক্ষণ পরে কর্নেল আবার আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, ব্রিগেড কমাণ্ডারের কাছে ইকবাল শফি এখনই আপনাকে ডেকেছেন। আমাকে নিয়ে কর্নেল খিজির হায়াত ব্রিগেড কমাণ্ডারের কাছে গেলেন। ব্রিগেড কমাণ্ডার আমাকে দেখেই বললেন আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। বিশেষ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে যা একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ সম্পন্ন করতে পারবে না এবং সেই জন্য আমি তোমাকেই নির্বাচিত করেছি। আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে না। তিনি আরো বললেন, তোমার মত একজন সিনিয়র আফিসাকে এই জন্য মনোনিত করা হয়েছে। আমি ট্রপস ছাড়া শমসেরনগরে ইপিআর-এর একটি কোম্পানী আছে। এই বড় ফোর্স এর নেতৃত্ব


  1. খালেদ মোশারফ একাত্তরের মার্চে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টে সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড হিসাবে মেজর পদে ছিলেন।