পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১০৯

তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হয় এবং পিছু হটে যায়। ১৯শে জুন সকাল ৬টায় পাকসেনারা অন্ততপক্ষে ২টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে দুই দিক থেকে (লাকসাম এবং ফেনীর দিক থেকে) প্রবল আক্রমণ শুরু করে। তীব্র কামানের গোলার মুখে আমাদের সম্মুখবর্তী সৈনিকরা পিছু হটে আসতে বাধ্য হয়। পাকসেনাদের আক্রমণ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পাকসেনাদের আক্রমণে আমাদের চৌদ্দগ্রামে অবস্থানটি সংকটময় হয়ে পড়ে। আর বেশিক্ষণ এ অবস্থানটিতে থাকলে রাতের অন্ধকারে শত্রুসেনা দ্বারা পরিবেষ্টিত হবার আশংকা ছিল। যদিও পাকসেনাদের সমস্ত দিনের যুদ্ধে অন্তত ২০০ জন হতাহত হয়েছিল এবং আমাদের পক্ষে ক্ষতির সংখ্যা ছিল ২ জন নিহত এবং ৪ জন আহত। তবুও চৌদ্দগ্রাম শত্রুদের প্রবল আক্রমণের মুখ থেকে আর রক্ষা করা যাবে না বলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমাদের সেনাদল অবস্থানটি পরিত্যাগ করে।

 মে মাসে যখন আমাদের শত্রুদের সঙ্গে সম্মুখসমর চলছিল, সে সময় আমার মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু বাহিনীর পিছনে তাদের আক্রমণ চলিয়ে যাচ্ছিল। ২১ শে মে দুজন মুক্তিযোদ্ধা জামাল এবং খোকন একটি এ্যাণ্টি-ট্যাংক মাইন পুঁতে শত্রবাহী একটি ট্রাককে কুমিল্লার নিকট উড়িয়ে দেয়। গেরিলাদের আর একটি পার্টি দেবীদ্বার থানা আক্রমণ করে ছয়জন দালাল পুলিশকে নিহত করে। গেরিলাদের হাতে হাজিগঞ্জ থানার একজন পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর ও দুইজন দালাল পুলিশ নিহত হয়। এ পুলিশদের নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে পাকবাহিনীর একটি ছোট দল (দশজনের মত) হবিগঞ্জ থানা পাহারায় নিযুক্ত হয়। গেরিলারা একদিন আক্রমণ চালিয়ে তাদের চারজনকে নিহত করে।

 এ সময়ে ঢাকাতে আমাদের কমাণ্ডো ছেলেরা নয়টি সরকারী অফিসে আক্রমণ চালিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। সেগুলো ছিল সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, সদরঘাট টার্মিনাল, পাকিস্তান অবজারভার অফিস প্রভৃতি। এসব আক্রমণে চারজন পাক সেনা অফিসার এবং দুজন সৈনিক নিহত হয়।

 কুমিল্লার দক্ষিণে গৌরীপুর নামক স্থানে আমাদের কমাণ্ডোরা পাকসেনাদের উপর আকস্মাৎ আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণেও পাকসেনাদের ৯ জন সৈন্য নিহত হয়।

 পাকসেনারা ইতিমধ্যে শালদানদী এরিয়াতে বিশেষভাবে তাদের সৈন্য সংখ্যা বাড়াতে থাকে। তাদের ১টা রেলওয়ে ট্রলি যা শত্রুদের জন্য রেশন এবং এমুনিশন নিয়ে যাচ্ছিল ২১ শে মে আমাদের একটা ছোট এ্যামবুশ দলের হাতে ধরা পড়ে। এর ফলে আমাদের হস্তগত হয় এমজিআইএ ৩, ৭৫ এম এম এবং ১০৬ আর আর এর শেল।

২২শে মে তারিখে মুজাহিদ ক্যাপ্টেন আবদুল হকের নেতৃত্বে একটি গেরিলা দল শালদানদী এলাকায় অবস্থানরত শত্রুদের প্রতিরক্ষা ঘাঁটির উপর অকস্মাৎ আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণটা শত্রুদের পিছন থেকে পরিচালিত করা হয়। শত্রুরা এ রকম আক্রমণের জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না। মুজাহিদ ক্যাপ্টেন আবদুল হকের প্লাটুন শত্রুদের অবস্থানটি ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে। শত্রুরা তাদের অবস্থানের ভিতর এ অতর্কিত আক্রমণে সম্পূর্ণ হকচকিত হয়ে যায়। এ আক্রমণের ফলে পরে আমরা জানতে পারি যে, শত্রুদের প্রায় ১৫ জন হতাহত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৪জন মারা যায়।

 ২৫শে মে রাত আড়াইটার সময় আমাদের এ্যামবুশ পার্টি বাটপাড়া জোড়কাননের নিকট শত্রুদের ১টা ট্রাক এবং ১টা আরআর রাইফেল-এর জীপ এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে শত্রুদের প্রায় ২০ জন সৈনিক ট্রাক এবং জীপসহ ধ্বংস হয়ে যায়। ২৯শে মে সকাল সাড়ে ৬টায় একটা এ্যামবুশ পার্টি সুবেদার আবদুর রহমানের নেতৃত্বে ১৫ জন লোক নিয়ে কুমিল্লার উত্তরে রঘুরামপুর নামক স্থানে এ্যামবুশ করে বসে থাকে। শত্রুদের একটা পেট্রোল পার্টি ১ জন অফিসার ও ২৫ জন সৈন্য নিয়ে আমাদের এ্যাবুশের ফাঁদে পড়ে যায় এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ২৭ শে মে মন্দভাগ থেকে ১টি প্লাটুন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় কুট শাদানদীর সিএণ্ডবি রাস্তার