পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৩৯

 ১লা এপ্রিল ৭১ আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আখাউড়া যাই। ইপি- সৈন্যদের সাথে যোগাযোগ করলাম। তারা বলেন যে তারা আমার সাথে (মানে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সাথে) একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করবে। তারা আমার কাছে কিছু অস্ত্র চাইলে আমি অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজী হই। তারপর ইপি-আর-এর সৈন্যরা আখাউড়া, গঙ্গাসাগর ও উজানীসাহা ব্রীজের আশেপাশে ডিফেন্স নেয়। আমি আগরতলায় বিএসএফ-এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করি এবং তাদের কাছে কিছু অস্ত্র চাই। এবং তারা তা দিতে চান। লেঃ কর্নেল দাসের সাথে রাতে ফোনে যোগাযোগ করি।

 ১/২ তারিখে আমি আখাউড়ার আওয়ামী লীগের সহসভাপতিকে সংগে করে আগরতলায় বিএসএফ- এর লেঃ কর্নেল দাসের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। মিঃ দাস ১০ হাজার গুলি ও একশত ৩০৩ রাইফেল ও কিছু এক্সপ্লেসিভ দিতে অঙ্গীকার করেন এবং পরে তিনি তা দেন। এ অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারে যে কণ্ট্রাক্ট হয় সে কণ্ট্রাক্ট করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এম-এন-এ আলী আজম সাহেব। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এম-এন-এ আলী আজম ও লুৎফুল হাই সাচ্চু সাহেব বেঙ্গল রেজিমেণ্টদের খাওয়া-দাওয়া, গাড়ি ইত্যাদি দিয়ে প্রচুর সাহায্য করেছেন যুদ্ধ চলা অবস্থায়। সৈন্য জনাব আলী আজম ৩০ তারিখের পূর্বেই আগরতলা গিয়ে অস্ত্রের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিলেন।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মেজর হাবিবুল্লাহ বাহার (যিনি কুমিল্লা ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে পালিয়ে এসেছিলেন- ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার-কমাণ্ডিং অফিসার (তিনি কুমিল্লা থেকে পালিয়ে আসেন) এবং ক্যাপ্টেন সায়গলকে (যে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে) তেলিয়াপাড়া ক্যাম্পে অন্য কাজে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

 আমি যখন কুমিল্লা থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রওনা দিই তখন যে প্রায় একশত সৈন্য রেখে আসি তারা কুমিল্লা ক্যাণ্টনমেণ্টে বেপরোয়া হয়ে পাঞ্জাবীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এর ফলে প্রায় ৩-৪ শত পাঞ্জাবী সৈন্য মারা যায়। কিছু বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সৈন্য শহীদ হন।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আমি ১৫/২০ জন এম-পি-এ কে ভারতে পাঠিয়ে দিই। এপ্রিল মাসে আমি জানতে পারি যে, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব ভৈরব এসেছেন। সৈয়দ সাহেবকে অবহিত করাই যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে এবং বেঙ্গল রেজিমেণ্টের অধীনে আছে। আমি সৈয়দ সাহেবকে আনার জন্য স্পিডবোট পাঠাতে চাইলে তিনি আসতে রাজী হন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসননি। এ সময়ের মধ্যে আমি বিভিন্ন জেলায় অয়ারলেসের মাধ্যমে খবর নিতে লাগলাম যে কোথায় বাঙালীরা রিভোল্ট করল। আমি জানতে পারলাম ময়মনসিংহে মেজর সফিউল্লাহ আছেন ও নরসিংদিতে একটি কোম্পানী আছে মেজর মতিউর রহমানের নেতৃত্বে। মেজর সফিউল্লাহ একটি পরিকল্পনা করেন যে, মেজর মতিউর রহমানের বাহিনীও তাঁর কোম্পানী মিলে ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্ট আক্রমণ করবে ও দখল করবে। এ সংবাদ আমি মেজর খালেদ মোশাররফ সাহেবকে জানাই। তিনি এ খবর পেয়ে তেলিয়াপাড়া থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে চলে আসেন। এখানে একত্র হয়ে তারা সবাই মেলে যুক্তি করে ভালভাবে কাজ করতে পারবে। পরে সফিউল্লাহ সাহেব পুরো ব্যাটালিয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে চলে আসেন এবং মেজর মতিউর রহমান সাহেব ভৈরব ব্রীজের কাছে ডিফেন্স নিয়ে থাকেন।

 এদিকে মেজর নাসিম এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে আশুগঞ্জ ডিফেন্স দিয়ে থাকেন ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ছিলাম আমি, ভৈরবে ছিলেন মেজর মতিউর রহমান এবং আশুগঞ্জে ছিলেন মেজর নাসিম। বাকি সবাই তেলিয়াপাড়া চলে যান।

 মেজর সফিউল্লাহ ও মেজর খালেদ মোশাররফ সাহেব যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একত্রিত হলেন তখন তারা সিদ্ধান্তে আসতে চাইলেন যে, তারা কুমিল্লা ক্যাণ্টমেণ্ট আক্রমণ করবেন কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখলেন কুমিল্লা