পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৬০

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল

শিরোনাম সূত্র তারিখ
8। জয়দেবপুর-তেলিয়াপাড়াব্যাপী সশস্ত্র প্রতিরোধে ২য় বেঙ্গল রেজিমেণ্ট ও অন্যান্য বাহিনী সাক্ষাতকারঃ মেজর জেনারেল (অব) কে. এম সফিউল্লাহ[১] ………………১৯৭১

 ১৪/১৫ই মার্চ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমাদের ব্যাটালিয়নকে নিরস্ত্র করা হবে। এ গুজবের মধ্যে কিছু সত্যতাও ছিল। আমাদের কাছে কিছু প্রয়োজনের অতিরিক্ত অস্ত্রশস্ত্র ছিল। সেগুলো জমা দেওয়ার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরাও সেই নির্দেশ মানার জন্য তৈরী হচ্ছিলাম। এই গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ই মার্চ জনসাধারণ জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৫০ জায়গায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এতে আমাদের খাদ্য সরবরাহে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় আমি প্রথম ব্যারিকেডে গিয়ে জনসাধারণকে বলি যে, আপনারা আমাদের উপর আস্তা রাখুন। আমি ১৭ বৎসর সামরিক বাহিনীতে চাকুরী করেছি অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য, ফিরিয়ে দেবার জন্য নয়। এই জন্যে আমাদের উপর আপনাদের আস্থা রাখতেই হবে। আপনারা যদি না রাখেন তবে আমাদের উপর আস্থা রাখার মত লোক আর কেউ নেই। এই কথা শুনে তারা বলল যে আমরা আপনার ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডারের সাথে দেখা করতে চাই। জনতার মধ্য থেকে চার-পাঁচজন গণ্যমান্য নেতা আমার সঙ্গে আসলেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার-এর সাথে দেখা করার জন্য। সেখানে ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার এই আশ্বাস দিলেন যে আমাদের উপর আস্থা রাখুন। আমাদেরকে বিশ্বাস রাখুন এবং এই প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলুন। এতে আপনাদের সুবিধে হবে এবং আমরা কোন নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ব না। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলবো বলে আশ্বাস দিয়ে তারা চলে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিবন্ধকতা উঠানো হয় নাই। শেষ পর্যন্ত আমরা নিজেরাই গিয়ে প্রতিবন্ধকতা উঠাচ্ছিলাম। কিন্তু একদিকে যেই আমরা ব্যারিকেড সরাচ্ছিলাম অপরদিকে জনসাধারণ আবার ব্যারিকেড সৃষ্টি করছিল। এর বিরুদ্ধে কোন কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাক সেনাবাহিনীর চোখে আমরা সন্দেহভাজন হয়ে পড়েছিলাম।

 ১৯শে মার্চ সকাল দশটার দিকে ঢাকা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে আমাদের কাছে অয়ারলেসে এই মর্মে এক মেসেজ পাঠানো হয় যে “The Commander with his escort is coming to have lunch with you. He would visit Gazipur Ordnance Factory. এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গাজীপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতেও এরূপ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। এবং সেখানে আমাদের ব্যাটালিয়ন-এর লোকজন গিয়ে গাজীপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর রেসিডেণ্ট ডিরেক্টর ব্রিগ্রেডিয়ার করিমউল্লাহ্ (পশ্চিম পাকিস্তানী)-কে অস্বস্তিকর পরস্থিতি থেকে উদ্ধার করা হয়। (তাঁকে ফ্যাক্টরীর লেবাররা ঘেরাও কের রেখেছিল)। এ ঘেরাও থেকে উদ্ধার করতে আমাদের কোন বেগ পেতে হয়নি। ১২টার দিকে একটা মেসেজ আসে যে “I had cleard some barriacade. Now I am at ‘Chowrasta’. I am using the civilians to open the barricade. You also clear the barricade from your side and meet me enroute. If there is any opposition use maximum force.” এ খবর পাবার পর আমরা আমাদের লোকজনকে নিয়ে জয়দেবপুর থেকে প্রতিবন্ধকতা সরাতে সরাতে অগ্রসর হই এবং ব্রিগেড কমাণ্ডার-এর সাথে রাস্তায় মিলিত হই।


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে জয়দেবপুরে ২য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড হিসেবে মেজর পদে কমৃরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি ১৯৭৫ সালে গৃহীত। উল্লেখ্য মেজর জেনারেল (অবঃ) কে, এম. সফিউল্লাহর পক্রিকান্তরে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বর্ণিত জয়দেবপুর সেনানিবাসের ঘটনাবলীর ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করে ২য় বেঙ্গলের তৎকালীন অদিনায়ক লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী আবদূর রকীব ১৩ মে ১৯৮৩ সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রার’র ‘ভিন্নমত’ শীর্ষক কলামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তদুত্তরে পরবর্তী সময়ে বিচিত্রারএকই কলামে মেজর জেনারেল (অবঃ) সফিউল্লাহর একটি প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়। এগুলি এখানে একই সঙ্গে সংযোজিত হলো।