পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৬৩

 কিছুক্ষণ গুলি বিনিময় হয়। এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বেঙ্গল রেজিমেণ্ট-এর বাকী সৈন্যসহ আমি তখন প্যালেসে ছিলাম এবং গুলির আওয়াজ শুনে কিছুসংখ্যক সৈনিককে জাহানজেব আরবাবের ট্রুপস-এর পিছনে মোতায়েন করি। এর দুটো উদ্দেশ্য ছিল জনতার হাত থেকে সৈনিকদের বাঁচানো এবং যদি বিগ্রেড কমাণ্ডারের অশুভ উদ্দেশ্য থাকে তা প্রতিহত করা।

 এ খণ্ডযুদ্ধ প্রায় পনর বিশ মিনিটের মত চলে এবং এরপর সম্পূর্ণ এলাকা জনতামুক্ত। জনতা চলে যাবার পর আমরা ব্যারিকেড খুলে ফেলি। এরপর বিগ্রেড কমাণ্ডার ঢাকার দিকে চলে গেলেন এবং যাবার আগে নির্দেশ দিয়ে গেলেন জয়দেবপুর ও গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার মধ্যে সান্ধ্য আইন জারী করার জন্য এবং আরো বলে গেলেন অয়ারলেসে তাকে জানাবার জন্য কি রকম এ্যামুনিশন খরচ হয়েছে এবং কতজন হতাহত হয়েছে। আমরা তারপর খোঁজ নিয়ে জানলাম যে, দুইজন লোক নিহত হয়েছে এবং কিছুসংখ্যক আহত হয়েছে। বিগ্রেড কমাণ্ডার যাবার সময় চৌরাস্তায় কিছু লোক দেখতে পায়। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য দূর থেকে গুলি ছোঁড়ে এবং এতে দুজন লোক মারা যায়। আহতদের সংখ্যা জানা যায়নি।

 আমরা নির্দেশ অনুযায়ী সান্ধ্য আইন জারী করি। সন্ধ্যা পাঁচটার দিকে পাঁচজন নিখোঁজ লোককে আমরা মসজিদের পাশের এক কক্ষ থেকে উদ্ধার করি। স্থানীয় নেতাদের সাহায্যে এবং আমাদের লোকদের সাহায্যে তল্লাশী চালিয়ে পরদিন দুপুর পর্যন্ত ৪টি রাইফেল উদ্ধার করতে সক্ষম হই। তিন-চারদিন পর গফরগাঁও থেকে এসমএমজিটি উদ্ধার করি। অস্ত্রশস্ত্র খুঁজে বের করা পর্যন্ত ঐ বেলায় সান্ধ্য আইন বলবৎ ছিল। যদি বিগ্রেড কমাণ্ডার সেখানে না থাকত তাহলে আমরা ব্যারিকেড খুলে ফেলতে পারতাম। কোন হতাহত হতো না। যেভাবে এ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা হয়েছে তাতে বেঙ্গল রেজিমেণ্ট-এর সৈন্যরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। ঐদিনই রাতে ৫ জন বাঙ্গালী সৈন্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে ৪টি চাইনিজ রাইফেল এবং একটি এস-এমজি এ্যামুনিশনসহ ছিল। সন্ধ্যার সময় অয়ারলেসে আমরা বিগ্রেড কমাণ্ডারকে জানালাম যে, আমাদের ৬৩ রাউণ্ড গুলি খরচ হয়েছে এবং আমাদের কিছুসংখ্যক সৈন্য আহত হয়েছে। দুজন বেসামরিক লোক নিহত এবং বেশ কিছুসংখ্যক আহত হয়েছে। যদিও তিনি বললেন যে ভাল করেছ, কিন্তু তিনি মনে মনে খুশী হতে পারেননি। কেননা তিনি বলেছিলেন, why 63 round spent and only two dead?

 ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার-এর কর্তব্য এবং দায়িত্ব তার ব্যাটালিয়নের শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তিনি সুস্থ মস্তিষ্ক কিছুই করতে পারেননি। বিগ্রেড কমাণ্ডার-এর কাছ থেকে তাঁর উপর কারণ দর্শাও নোটিশ এলো কিভাবে ট্রাকের পাঁচজন সৈন্য থেকে অস্ত্র নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলো? এবং পাঁচজন কেন অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গেল? ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার এক্সপ্লানেশন-এর জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জবাবে বিগ্রেড কমাণ্ডার সন্তুষ্ট হননি। শেষ পর্যন্ত তিনি বিগ্রেড হেডকোয়ার্টারে নিজে গিয়ে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। যাবার পূর্বে আমার সাথে পরামর্শ করেন। আমি তাকে বলেছিলাম যে যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনাকে ডাকছে ততক্ষণ আপনি ঢাকাতে যাবেন না। যেহেতু তিনি মানসিক অস্থিরতাতে ছিলেন সেহেতু তিনি সেই অস্থিরতা দূর করার জন্য ২৩শে মার্চ ঢাকা বিগ্রেড হেডকোয়ার্টারে আসলেন। সেখানে যাবার সাথে তাঁকে বিগ্রেড কমাণ্ডার জাহানজেব আরবাব বললেন, তোমাকে ব্যাটালিয়নে ফিরে যেতে হবে না। তুমি স্টেশন হেডকোয়ার্টারে এটাচড্; ব্যাটালিয়নের ঘটনাবলী নিয়ে তদন্ত হবে। তার পর থেকে ঢাকাতে থেকে যেতে বলা হয়। সেহেতু তিনি আর ব্যাটালিয়নে ফিরে যেতে পারেন নি। আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে কর্নেল মাসুদ স্টেশন হেডকোয়ার্টারে এটাচড়; এবং তার অনুপস্থিতিতে আমি যেন ব্যাটালিয়ন-এর কার্যভার গ্রহণ করি।

 ২৫শে মার্চ বেলা ১১টার সময় আমাকে বিগ্রেড থেকে জানানো হয় যে, বিগ্রেডিয়ার মজুমদার, সেণ্টার কমাণ্ড্যাণ্ট, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট, চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নে আসছেন এবং সৈন্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। আরো জানানো হয় নতুন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল কাজী রকিব উদ্দিন নতুন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার হিসেবে আসছেন এবং তিনিও আজ পৌঁছে যাবেন। কর্নেল মাসুদ আমাকে ১১টার দিকে টেলিফোনে বলেন যে, লেঃ