পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৩২

 ২৮শে মার্চ কিছু বাঙ্গালী ইপিআর অফিসে আসে। আমরা ঐ দিন অফিসে আসিনি। পরে আমাদের গাড়ীতে করে নিয়ে আসা হয়। ২৮ তারিখেই আলমারীর এবং অন্যান্য চাবি নিয়ে নেয় হয় এবং বলা হয় ‘তোমরা অফিসে এসো না, দরকার হলে আসতে বলবো’। ক্যাপ্টেন নসির নাজির এটা বলেন।

 ৩রা এপ্রিল ৩১ পাঞ্জাব ১২নং উইং আক্রমণ করে সকালে। এই খবর এখানকার ইপিআররা আগে থেকেই জানতে পেরে ঐ দিন অস্ত্রশস্ত্রসহ পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ঐ দিন ঐ উইংয়ে পাঞ্জাবীদের আক্রমণে ৩জন ইপিআর গার্ড শহীদ হন। আখালিয়াতে সেক্টর হেডকোয়ার্টারের একটি ৬ পাউণ্ডের প্লাটুন থাকতো ট্রেনিং-এর জন্য। ৩নং শাখার একটি কোম্পানী আখালিয়াতে থাকতো।

 ৪ঠা এপ্রিল ভোরের দিকে ৩১ পাঞ্জাব আখালিয়া আক্রমণ করে। ১২নং শাখার হেডকোয়ার্টার এভাবে পাকবাহিনীর হাতে চলে যায়। আখালিয়াও পাক সেনার হতে চলে যায়। ৪ঠা এপ্রিল সিলেট সেক্টর থেকে অবাঙ্গালী ইপিআররা চলে যায়। পাক সেনারা ঐ তারিখের পর থেকে খাদিমপুরে থাকা শুরু করে।

 উল্লেখ্য যে, ২৭শে মার্চ ক্যাপ্টেন গোলাম রসুল (১২নং শাখার সহকারী উইং কমাণ্ডার) বাঙ্গালী মিশিয়ে একটি প্লাটুন শমসেরনগর বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। এই প্লাটুনের অগ্রবর্তী দলটি ১০/১২ জন ডজ গাড়ীতে করে শমসেরনগর ডাকবাংলোতে আসে। এই দলের ড্রাইভার অগ্রণী হয়ে বলে, দ্বিতীয় দলে ক্যাপ্টেন সাহেব আসলে আমাদের বন্দী করতে পারে। অতএব, এখনই ক্যাপ্টেনকে খতম করে দিই। সাথে সাথে বাঙ্গালী ইপিআররা ডাকবাংলোর ছাদের উপর উঠে যায় এবং লাইট মেশিনগান নিয়ে পজিশন নেয়। সাথের দু’জন পাঞ্জাবী সিপাই পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যাপ্টেন গোলাম রসুল দ্বিতীয় গাড়ীতে আসে। ইপিআর দলটি উপর থেকে ফায়ার ওপেন করে। সাথে সাথে ক্যাপ্টেনসহ প্রায় সবাই নিহত হয়। ২/১ জন আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়।

 ৩নং শাখা কমাণ্ডার জাবেদ বরকত চৌধুরী ঐ তারিখে একটি ইপিআর-এর দল নিয়ে শমসেরনগর রওয়ানা হয়েছিল। পথে ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলের মৃত্যুখবর শুনে ফিরে আসে। ৪ঠা এপ্রিলের পর থেকেই পাকসেনারা গাড়ী করে শহরে মাঝে মাঝে টহল দিতে থাকে।

 অসহযোগ আন্দোলনের সময়েই সামরিক অফিসারের পরিবারদের পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। কেবল জেসিও-এনসিওদের পরিবার ছিল।

 ৭ই এপ্রিল সকল পাকসেনা সিলেট শহরের খাদিমপুর ছেড়ে সালুটিকর বিমান বন্দরে ঘাঁটি গাড়ে। ঐ রাতে ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১১ জন পুলিশকে পাকসেনারা হত্যা করে। সিলেট শহরে কিছু আনসার, মুজাহিদ, ইপিআর প্রবেশ করে।

 পাকসেনারা সালুটিকর বিমান বন্দর থেকে গাড়ী করে সিলেট শহরে পেট্রোলিং করতে আসতো। ৯ই এপ্রিল থেকে ১২ই এপ্রিলের মধ্যে পাকসেনারা সিলেট শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিবাহিনীর সাথে খণ্ড যুদ্ধ হয়। পাকসেনারা শহর দখল করে নেয়।

 সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের একটি কোম্পানী ছিল। ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ মিলে একটি কোম্পানীও ওখানে ছিল। পাকসেনারা উত্তর দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায় ঐ তারিখে।

 ১২/১৩ এপ্রিল পাকসেনারা বিমান হামলাও চালায়। মুক্তিবাহিনী সব ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় পাকবাহিনীর প্রবল আক্রমণে। কিছু ইপিআর শেওরা নামক স্থানে আসে, সেখানে মেজর সি, আর দত্ত ছিলেন।

 ২৩শে এপ্রিল তারিখে ইপিআর-আনসার মিলে ৩০০ এবং ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর ৩০০ মত সৈন্য মিলিত হয়ে গোলাপগঞ্জ নামক স্থানে ডিফেন্স নেয়। ২৪শে এপ্রিল পাকসেনারা গোলাপগঞ্জের মুক্তিবাহিনীর