পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: নবম খণ্ড
২৪৯

স্কোয়াড্রন ট্যাঙ্ক, এক ইনফ্যাইণ্ট্রি ব্যাটালিয়ন সৈন্য যশোর আক্রমণের জন্য চাইলাম। ভারতীয় প্রধান বললেন, আমরা সরাসরি সাহায্য করতে পারছি না, তবে গোপনে আপনাদের সাহায্য করবো এবং আপনাদের এই চাহিদা দিল্লী নিয়ে যাচ্ছি আলোচনার জন্য। আমি আবার দেখা হবে বলে চলে আসি।

 ২৮ শে মার্চ থেকে ট্রেন চালু হয়ে যায় ভারত সীমান্ত থেকে। ইতিমধ্যে ভারতীয় নাগরিকরা সাবান, পেট্রোল, খাবার, ঔষুধপত্র ইত্যাদি যাবতীয় জিনিস নিয়ে এসে আমাদের সাহায্য করতে থাকে।

 ২৬ শে মার্চ রাতে মেহেরপুরে এসডিও তৌফিক এলাহি সাহেব এবং ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবুউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় কুষ্ঠিয়া সম্পর্কে। কুষ্টিয়াতে ইতিমধ্যে পাক সৈন্য চলে এসেছিল। কিভাবে আক্রমণ করা হবে এ বিষয়ে আমরা মত বিনিময় করি।

 কুষ্টিয়াতে কত পাকিস্তানি সৈন্য আছে তা জানবার জন্যে ইপিআর ক্লার্ক বারি এবং আরো দু'একজনকে পাঠাই। কুষ্টিয়াতে কত সৈন্য ছিল তার সঠিক সংখ্যা পেলাম না। মেজর ওসমান আমাকে ২৯ তারিখে কুষ্টিয়া আক্রমণ করতে বললেন।

 তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কুষ্টিয়া আক্রমণ করার প্ল্যান হয়। একটি দল যায় ভেরামার তারাগঞ্জ হয়ে এবং দ্বিতীয় দল নিয়ে আমি নিজে চুয়াডাঙ্গা-পোড়াদহ হয়ে যাই। তৃতীয় দল যায় ঝিনাইদহ এবং কুষ্টিয়ার মাঝে তারাগঞ্জ দিয়ে। সার্বিক ভাবে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম আমি। আমরা প্রাথমিক অবস্থায় ২০০ জনের মত ছিলাম। পরাগপুর-ভেরামারার নেতৃত্ব দিচ্ছিল সুবেদার মজাফফর আহমদ।

 ২৯ তারিখে আক্রমণের কথা ছিল, কিন্তু নানা কারণে ওই তারিখে সম্ভব না হওয়ায় ৩০শে মার্চ ভোর পাঁচটার সময় আমরা এক সময়ে তিন ভাগ থেকে আক্রমণ চালাই। সারাদিন আক্রমণ চালাই।

 ৩১ শে মার্চ কুষ্টিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত হয়। ২৫০ জন পাক সৈন্য মারা যায়, কিছু ধরা পড়ে লেঃ আতাউল্লাহ তাদের মধ্যে একজন। আমাদের মুক্তিবাহিনীর ২জন মারা যায়, কিছু আহত হয়।

 ৩১ শে মার্চ সকাল ১০ টার দিকে পাক বাহিনীর বিমান এসে বোমাবর্ষণ করে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে, কেউ মারা যায়নি। ঐ দিনই আমি টেলিফোন মারফত মেসেজ পেলাম আমাকে যশোরের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আমি ১ লা এপ্রিল যশোরের দিকে রওনা হই।

 ৩১ শে মার্চ সকাল ৯ টার দিকে বিশখালীতে যে দল আমাদের ছিল তাদের সাথে যশোর থেকে আগত পাক বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। যশোর বাহিনী কুষ্টিয়ার দিকে যাচ্ছিল সাহায্যের জন্য। কিন্তু ব্রিজের ওখানে ব্যারিকেড থাকায় তারা যেতে পারেনি। ওখানে মুক্তি বাহিনীর ২ জন মারা যায় এবং ৩/৪ জনকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। যশোর সেনানিবাস থেকে ৭ মাইল দূরে আমরা পজিশন নিই। মেজর ওসমানের নির্দেশক্রমে আমরা দূরে ঘাঁটি গাড়ি। কেননা ভারত থেকে ভারী অস্ত্রের অপেক্ষা করছিলাম। আমার হেডকোয়ার্টার ছিল ঝিনাইদহ। আমার একটি পেট্রোল ছিল মাগুরার এসডিও'র সহযোগিতায় লেবুতলায়। সুবেদার আব্দুল মুকিদ ছিল কমাণ্ডিং অফিসার। ৫/৬ ই এপ্রিল পাক বাহিনীর একটি সার্চিং পার্টি লেবুতলার দিকে নিয়ে আসে রেকি করতে। আমাদের দল তৈরী ছিল, কারণ আগে থেকেই আমরা জানতাম যেহেতু যশোর-কুষ্টিয়া রোডে আমরা আছি তাই অন্য দিকে নিশ্চয় গ্যাপ খুঁজতে আসবে। এ্যামবুশে পাক বাহিনীর ১৫/১৬ জন মারা যায়, একজন লেফটেন্যাণ্টসহ। আমরা বহু ম্যাপ, নোটবুক উদ্ধার করি। মর্টার ফায়ার করে পাক বাহিনী তাদের মৃত দেহ নিয়ে যায়।

 ইতিপূর্বে ২৭/২৮ তারিখের দিকে লেঃ কঃ জলিলের (১ম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট) কাছে আমরা দু'বার মেসেজ পাঠাই আমাদের সাথে যোগ দেবার জন্য, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তখন কর্নেল জলিল সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাসলিয়াতে ছিলেন।