পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮৩

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: নবম খণ্ড

যাচ্ছিল। ট্রেনটা যখন টোগরাইহাটের নিকট আসে তখন আমরা পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে খুব দূরে থেকে কয়েক রাউণ্ড গুলি ছুড়ি। এই গুলির আওয়াজে খান সেনারা গাড়ি থেকে নেমে পজিশন নেয়। পুনরায় আরও কয়েক রাউণ্ড গুলি ছুড়লে খান সেনারা গুলির শব্দ যেদিক থেকে আসছিল সেই দিকে ধাওয়া করে। তারা যখন আমাদের নিকটবর্তী হয় তখন আমরা তাদের উপর আক্রমণ করি। উভয় পক্ষ থেকে সমান তালে যুদ্ধ চলতে থাকে। এই যুদ্ধ ১৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধে বহু খান সেনা নিহত হয় বলে আমরা খবর পাই, আর বাদ বাকী সৈন্য পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

 যুদ্ধ শেষে আমরা যখন তিস্তা ব্রিজের দিকে যাছিলাম তখন রাস্তায় খান সেনাদের তিনটা দালালকে ধরতে সক্ষম হই। এরা ঐ অঞ্চলে লুটতরাজ, ডাকাতি, নারী ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনাস্থলেই তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সৈয়দপুর-রংপুর প্রতিরোধে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেণ্ট
সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার মোহাম্মাদ আবদুল খালেক
১১-১০-১৯৭৩

 ৩য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে দুটো কোম্পানী লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল ফজল করিমের নেতৃত্বে (যিনি ৩য় বেঙ্গলের কমাণ্ডিং অফিসার ছিলেন) বগুড়াতে চলে যায়। দুটো কোম্পানী মেজর নিজামউদ্দীনের নেতৃত্বে ঘোড়াঘাটে (দিনাজপুর) পাঠানো হয় অনির্ধারিত সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য। দু’জন জুনিয়র অফিসার এবং কয়েকজন জেসিও-ও সাথে ছিল। হেডকোয়ার্টার কোম্পানী ইউনিট লাইনকে রক্ষা করার জন্য সৈয়দপুরে থেকে যায়।

 ২১শে ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিনগুলোতে প্রতিবেশী ইউনিট ২৬ ফ্রণ্টিয়ার ফোর্স রেজিমেণ্ট এবং ২৩ ফিল্ড গোলন্দাজ বাহিনীর কোন নির্ধারিত প্রশিক্ষণ সূচী ছিল না। ২৩ ফ্রণ্টিয়ার ফোর্সের কমাণ্ডিং অফিসার লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল আরশাদ কোরেশীকে সৈয়দপুর গারিসন কমাণ্ডার নিযুক্ত করা হয়। সুতরাং হেডকোয়ার্টার কোম্পানীর সবাইকে নিজেদের কাজকর্ম ছাড়াও তার নির্দেশমত কাজ করতে হত। ২৬ ফ্রণ্টিয়ার কোর্স-এর কিছু লোক আমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করার জন্য অস্ত্রশস্ত্র এবং আয়ারলেস সেটসহ পানির ট্যাঙ্ক পাহারা দেওয়ার ভান করে ইউনিটে থাকতে আরম্ভ করে। অপরপক্ষে ২৩ গোলন্দাজ বাহিনী তাদের কিছুসংখ্যক মেশিনগানকে আমাদের ইউনিটের অস্ত্রাগার, খাদ্য গুদাম, গ্যারেজ প্রভৃতি লক্ষ্য করে তাক করে রাখে। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে যে, আমরা এই এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এগুলো লাগিয়েছি।

 এ ছাড়াও তারা স্থানীয় জনসাধারণের উপর নানা রকম নির্যাতন চালাচ্ছিল। অসহযোগ আন্দোলনের সময় জনসাধারণ সেনানিবাসে সৈনিকদের রসদপত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাই পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা গ্রামে গিয়ে জোর করে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে হাঁস, মুরগী, ডিম, তরকারী নিয়ে আসত। কিন্তু বাঙ্গালী সৈন্যরা গ্রামে গেলে জনগণ তাদেরকে সবকিছু দিয়ে সাহায্য করত।

 এই সময় বগুড়ার ছাত্ররা বগুড়াতে যেখানে আমাদের কমাণ্ডিং অফিসার অবস্থান করছিলেন সেই ভবনের উপর বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। তারা সি-ওকে ঘেরাও করে রেখেছিল। কমাণ্ডিং অফিসার বগুড়া থেকে ঘোড়াঘাটে চলে যান। সেখানে আরো দুটো কোম্পানী ছিল।

 ১৫ই মার্চ আটিলারী রেজিমেণ্ট আমাদের ইউনিটের চারিদিকে পরিখা খনন করতে শুরু করে। আমরা ঘোড়াঘাটে আমাদের সি-ওকে এ খবর জানালাম। কমাণ্ডিং অফিসার কর্নেল শফি (২৩ আর্টিলারী রেজিমেণ্ট) কে এগুলো বন্ধ করতে অনুরোধ জানালেন। তাঁর অনুরোধে এ সমস্ত কাজ বন্ধ করা হয়েছিল।