পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৯৯

এবং দুশমনদের শতাধিক সৈন্য ও চার পাঁচখানা গাড়ী ধ্বংস করাসহ অশেষ ক্ষতি সাধন করিয়া তাহাদিগকে নির্বাক নিবীর্য করিয়া রাখে। আমার হিসাব মতে সিপাহী আবুল হোসেন একাই সত্তর জনের মত শত্রুসোন খতম করিয়াছে। তবে এই দলকে বহু কষ্টের মধ্যে দীর্ঘ দুই মাস কাটাইতে হইয়াছে, কেননা উন্মুক্ত আর নীচু জায়গায় পজিশন থাকা বিধায় দিনের বেলা এরা সামান্য নড়াচড়া পর্যন্ত করিতে পারিত না- শুধু রাত্রেই এদের খাওয়ার সুযোগ ঘটিত। আমি মাঝে মাঝে এই কোম্পানীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতাম। কোন কোন সময় আমি দেখিয়াছি বৃষ্টির মত গোলাগুলির মধ্যেও হাজী মুরাদ আলী তাহার লোজনের তদারকি করিয়া ফিরিতেছেন। আমার মতে হাজী মুরাদ আলীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই এই ক্ষুদ্র দলটি নির্ভীক সৈনিকের ভূমিকা পালন করিতে অনুপ্রাণিত হইয়াছিল।

দিনাজপুর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ঘটনাবলী

সাক্ষাৎকারঃ নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ আনসার আলী

১৯-১১-১৯৭৩

 ২৫শে মার্চ থেকেই দিনাজপুর শহরে ছাত্র- জনতার মিছিল বের হতে শুরু করে। ২৬শে মার্চ সকালেই আমরা সামরিক শাসন জারী করার কথা শুনি। এটা শুনে আমাদের সাথের পশ্চিম পাকিস্তানীরা আনন্দিত হয়েছিল এবং বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলছিল। ২৬শে মার্চ বেলা দশটার দিকে আমি ৩০/৪০ জন লোক নিয়ে নিউ টাউনে ডিউটি করতে যাই।

 ২৭শে মার্চ ১/২ টার দিকে বিহারীরা প্রায় ১২/১৩ জন বাঙ্গালীকে হত্যা করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

 ২৭শে মার্চ বেলা ১২/১ টার সময় তিনজন মেজর, কর্নের এবং দুই/তিনজন ক্যাপ্টেনসহ পশ্চিম পাকিস্তানীরা এক বৈঠক করে। বেলা সাড়ে তিনটার সময় বৈঠক শেষ হয়। শেষ হবার পর ঢাকার সাথে যোগাযোগকারী সিগন্যাল সেটের কমাণ্ডারকে জীপে উঠিয়ে নেয় এবং তার বাসার দিকে রওয়ানা হয়। সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ১৫/২০ জন বাঙ্গালী ছিল। কোয়ার্টার মাষ্টার আবু সাইদ খোন্দকার, হাবিলদার ভুলু এবং প্লাটুন হাবিলদার নাজিমও ছিল। বাকি সবাইকে ডিউটিতে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা এক জায়গায় একত্রিত না থাকে। জীপটা যখন অফিস থেকে রওয়ানা হয় সেই সময় আমাদের ৬- পাউণ্ডার প্লাটুন হাবিলদার নাজিম উদ্দিন ঐ জীপে লক্ষ্য করে গোলা বর্ষণ করে। কিন্তু গুলীটা জীপে না লেগে অফিসের কর্নারে লেগে যায়। তখন চারিদিক থেকে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার মধ্যে সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানীদের হত্যা করা হয়। জনগণ হেডকোয়র্টারে এসে অস্ত্রশসস্ত্র নিয়ে যায়। সেক্টর হেডকোয়ার্টারের একটু দূরে সার্কিট হাউসে ফ্রণ্টিয়ার ফোর্সের প্রায় ১৫০ জন সৈন্য রিজার্ভ ছিল।

 কাঞ্চন নদীর ওপারে গিয়ে আমরা অবস্থান নিতে শুরু করি। অস্ত্রাগার থেকে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নদীর ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নদীর ওপারে গিয়ে আমরা রিজার্ভে ১৫০ জনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই। এই সংঘর্ষ দুই তিন দিন চলেছিল।

 এপ্রিলের ৩ তারিখে ২/৩টা জীপে করে সার্কিট হাউস থেকে তারা পলায়ন করে দক্ষিণ দিকে পার্বতীপুর যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। মোহনপুরের আগে যাওয়ার পর সুবেদার শুকুর সাহেবের কোম্পানী তাদেরকে বাধা দেয়। তারা আবার দিনাজপুরে ফিরে আসে, ফিরে আসার পর শালবাগানে তাদের অনেককেই জনসাধারণ এবং বাঙ্গালী ইপিআর মেরে ফেলে। কর্নেল তারেক রসুল জীপ নিয়ে পার্বতীপুর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।