পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১০

বিমানে প্রেসিডেণ্ট একা যান। প্রেসিডেণ্টের এভাবে চলে যাওয়াতে আমার ধারনা হল যে, হয়তো জেনারেল হামিদ খান ক্ষমতা দখল করেছেন এবং ইয়াহিয়া খানকে বোয়িং-এ করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে জেনারেল হামিদ তখন ঢাকায় ছিলেন।

 ২৫শে মার্চ রাতে আমি বনানীতে আমার বাসায় ছিলাম। রাত বারটার পরে ভীষণ গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভোর রাত থেকে জনসাধারণ বনানীর ঐ পথ দিয়ে গ্রামের দিকে পালাচ্ছে।

 ২৭শে মার্চ আমি অফিসে আসি। সেই সময়কার বেস কমাণ্ডার ছিলেন এয়ার কমোডোর জাফর মাসুদ, যিনি মিঠঠি মাসুদ হিসাবে বিমান বাহিনীতে পরিচিত ছিলেন। আমরা বাঙ্গালী অফিসাররা তাঁর সাথে দেখা করলাম এবং দেশের এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁর সাথে আলাপ করলাম। তিনি বললেন, নো ওয়ান উইল টাচ মাই মেন অর অফিসারস বিফোর দে কিল মি’। আমরা তাঁকে অনুরোধ করলাম তিনি যেন সবাইকে ডেকে সান্তনা দেন। এর মধ্যে ২৯শে মার্চ সেনাবাহিনী বিমান বাহিনীর কাছে বিমান সাহায্য চেয়ে পাঠায়। তিনি সে সাহায্য দিতে অস্বীকার করেন।

 ৩০শে মার্চ তিনি বেসের সাবাইকে ডেকে ভাষণ দেন। তিনি বললেন, “তোমরা সবাই জান যে সেনাবাহিনী তৎপরতা চালাচ্ছে। আমি বিমান সাহায্য দিতে অস্বীকার করেছি। কিন্তু আমি কতদিন এটা ঠেকিয়ে রাখতে পারব বলতে পারছি না। সমস্ত বাঙ্গালী পাইলটকে এসব মিশনে যাওয়া থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি এবং যে সমস্ত বাঙ্গালী টেকনিশিয়ানরা এ সমস্ত বিমানে কাজ করতে চায় না তারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটিতে যেতে পারে।”

 এপ্রিল মাসের ৩/৪ তারিখে প্রথম বিমান হামলা চালানো হয় পাবনার আশেপাশে। এয়ার কমোডোরের নির্দেশ ছিল যদি কোথাও লোক জমায়েত দেখা যায় প্রথমে যেন ওয়ার্নিং শট করা হয় যাতে করে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অপরদিকে সেনাবাহিনীর নির্দেশ ছিল ম্যাসাকার করার জন্য। এ জন্য এয়ার কমোডোর জাফর মাসুদকে বদলি করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

 এর মধ্যে সমস্ত বঙ্গালী অফিসারকে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করা হয়। আমরা ছুটি নিলাম। আমরা কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। জিয়াউর রহমানের ভাষণ আমরা শুনেছিলাম। লোকমুখে শুনলাম যে, ময়মনসিংহ এলাকায় প্রতিরোধ চলছে। তখন ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট মির্জাকে খবর আনার জন্য পাঠানো হয়। সেও ঠিকমত কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তবে একটা থমথমে পরিবেশ সে লক্ষ্য করেছিল। ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট কাদেরকে আগরতলাতে পাঠানো হয়। সে ভারতে গিয়েছিল এবং খালেদ মোশারফের বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছিল। যখন সে ফিরে কুমিল্লা আসে তখন পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 ১২ই মে আমরা ঢাকা ত্যাগ করলাম। নরসিংদী হয়ে লঞ্চে রওনা হলাম। লঞ্চ থেকে আমরা দেখলাম যে পাকবাহিনী একটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সাথে আমাদের দেখা হয়। সে তার গ্রামের বাড়িতে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল।

ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরের আরও কিছু কথা

সাক্ষাতকারঃ আবদুল করিম খন্দকার

ডেপুটি চীফ অফ স্টাফ বাংলাদেশ ফোর্সেস

(জুন ৭১- ডিসেম্বর ৭১)

 ২৩শে মার্চ ১৯৭১-এ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ঢাকাতে এক আন্তঃসার্ভিসেস কুচকাওয়াজের আয়োজন করার কথা হয়েছিল। আমাকে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌ বাহিনীর ঐ প্যারেডের প্যারেড কমাণ্ডার-এর