পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩২৯

সারদা ও অন্যান্য স্থানের সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার আলী মোহাম্মদ মকিবর রহমান সরকার

০৬-০৬-১৯৭৩

 ২৫শে মার্চের ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়ে পড়ি এবং পশ্চিমা শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অস্ত্রে জবাব অস্ত্র দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হই।

 সারদায় অস্ত্র সংগ্রহঃ সারদা পুলিশ একাডেমির ভাইস প্রিন্সিপাল মিঃ বরুয়াকে সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান কে সম্পাদক করে এবং আমি স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসাবে থেকে একটি মুক্তি সংগ্রাম কমিটি গঠন করি। সেই মুহূত্বে আমাদের সঙ্গে পুলিশের কিছু অংশ; ইপিআর, আনসার; মুজাহিদ; ছাত্র; অধ্যাপক সব মিলে বিরাট এক মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। সারদা ক্যাডেট কলেজ থেকে ৩০৩ মার্কা রাইফেল এবং পুলিশ একাডেমি থেকে ৬০০/৭০০ রাইফেল ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করি এবং সারদা ও রাজশাহী রোডে বাঙ্কার করে পজিশন নিয়ে থাকি।

 রাজশাহীতে ইতিমধ্যে পাক সেনারা অবস্থান করছিল। আমরা একটি কোম্পানি নিয়ে রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা করি। কিছু দূর যাওয়ার পর আমরা শুনতে পাই যে; নাটোর হয়ে আর একটি ব্যাটালিয়ন ঢাকা- পাবনা-নগরবাড়ী পথে রাজশাহীর দিকে আসছে। ক্যাপ্টেন রশিদের নেতৃত্বে ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের প্রতিরোধের জন্য পাঠান হয়।

 আমরা প্রথম পাবনার মুলডুলিতে পাকসেনাদের সম্মুখীন হই। সংঘর্ষে পাকসেনাদের বিপুল ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে পিছু হটি। রাজশাহিতে অপর দল যেটি ছিল তাদের সঙ্গে পাক সেনাদের নিয়মিত যুদ্ধ হচ্ছিল। সংঘর্ষে সমস্ত পাকসেনা খতম হয়।

 ১২ এপ্রিল রাজশাহী সম্পূর্ণ মুক্ত করা হয়। অপর দলটি যেটি মুলাডুলিতে পিছু হটছিল নাটোরে গিয়ে পুনরায় পজিশন নেয়। সেখানেও ব্যাপক শেলিং-এর সামনে টিকতে না পেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে আমরা পিছু হটি। সেখান থেকে আমরা বানেশ্বরে (রাজশাহী) ডিফেন্স নিই। পাক আর্মির একটি ব্যাটালিয়ন ৭৫ মিলিমিটার কামান এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর আক্রমন করে।

 ইতিমধ্যে আমরা খবর পেলাম আড়ানীতে ২০/২৫ জন পাক সেনা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করছে এবং ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিচ্ছে। খবর পেয়ে আমি একটি ছোট সেকশন নিয়ে গ্রাম অভিমুখে রওয়ানা হই। গ্রামে গিয়ে শুনলাম নদীর অপর পাড়ে পাক সেনারা পজিশন নিয়ে আছে। আমরা ফায়ারিং শরু করি। বহুক্ষন ফায়ারিং-এর পর অপর পক্ষ থেকে কোন জবাব না আসায় আমি বিস্মিত হই। পরে সেখানে গিয়ে দেখলাম তারা ক্যামোফ্লেজ' করে পালিয়েছে। পাকসেনারা কলাগাছ কেটে তাতে খাকী কাপড় পরিয়ে এবং কাঠের তৈয়ারী রাইফেল হাতে দিয়ে নদীর পাড়ে আমাদের দিকে মুক করে রেখে দিয়েছে। আমরা ভাবছিলাম পাকসেনারা তাদের অস্ত্র নিয়ে পজিশন নিয়ে আছে।

 আড়ানী ব্রিজে প্রতিরোধঃ আমরা হতাশ হয়ে আমাদের মধ্যে কিছু আলোচনা করে আড়ানী ব্রিজের নিচে এ্যামবুশ করে থাকি। রাত্রি ৪টার দিকে বুঝতে পারলাম ব্রিজের উপর দিয়ে কিছুলোক যাচ্ছে। হল্ট বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফায়ারিং শুরু করে। আমরা পাল্টা জবাব দিই। কিছুক্ষন উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়। ৫/৭ মিনিট পর ব্রিজের উপরে পাকসেনারা সম্পূর্ন স্তব্ধ হয়ে যায়। আমরা সেখানে ৪টি পাক সেনার লাশ উদ্ধার করি। বাকি দই চারজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

 বানেশ্বরের যুদ্ধ ও সারদায় গণহত্যাঃ আমরা সবাই রওনা হযে ১৩ই এপ্রিল তারিখে বানেশ্বরের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেই। বানেশ্বরে পাকসেনাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আমাদের মুক্তি সেনারা