পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৩৮

সময় পেছনে হাটতে থাকে। সৈন্যরা তাদের মনের ঝাল মেটাবার জন্য বেশ কিছু লোককে ধরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ওদের সবাইকে গুলি করে মারে এবং তাদের মৃতদেহ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এছাড়াও এরা রেল লাইনের কাছে পাচঁজন হোটেলের বয়কে মেরে ফেলেছিল।

 তার পরদিন ২৭শে মার্চ তারিখে সৈন্যরা বগুড়ার কটন মিল মহিলা কলেজ; নাইট কলেজ আযিযুল হক সরকারী কলেজের পুরাতন ভবন এবং বেতার ভবন দখল করে সেসব জায়গায় ঘাটি গেড়ে বসল। তারপর তারা মহিলা কলেজ ও রেস্টহাউসের চারতলা বাড়ি থেকে মর্টার শেল রকেট এবং মেশিনগানের সাহায্যে শহরের উপর আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। এইভাবে সারাটা দিন কাটল। তার পরদিনও তারা শহরের লোকদের উপর নানাভাবে আক্রমন চালিয়ে যেতে লাগল।

 মোঝে মাঝে এখানে-ওখানে ছাত্রদের সঙ্গে গুলি বিনিময় চলছিল। দুপুর বেলা সৈন্যরা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যায় এবং সেখান থেকে লোককে ধরে নিয়ে আসে। এদের মধ্যে কিছু লোককে মেরে ফেলা হয়। এরা বাকী লোকদের সঙ্গীন উঁচিয়ে প্রাণের ভয় দেখিয়ে ব্যারিকেড সরিয়ে নেবার কাজে লাগায়। বেলা ৩টার সময় এই সৈন্যরা হাবিব ম্যাচ ফ্যাক্টরীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় ম্যাচ ফ্যাক্টরীরর ভেতর থেকে ওদের উপর গুলিবর্ষণ হতে থাকে। সৈন্যরা প্রতিহিসংসার বশবর্তী হয়ে হাবিব ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই আগুন সঞ্চিত বারুদের গাদায় গিয়ে লাগতেই এক বিরাট অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এবং নিকটবর্তী বাড়ীগুলোতে আগুন ধরে যায়।

 বেতার ভবনের পেছন দিককার পাড়াটা বৃন্দাবনপাড়া নামে পরিচিত। সৈন্যরা ২৯শে মার্চ তারিখে সেই পাড়ার উপর গিয়ে হামলা করে। সেখান থেকে তারা চাল হাল থেকে শুরু করে মোরগ; খাসি গরু পর্যন্ত লুটপাট করে নিয়ে আসতে থাকে। এরা সেখানে ঘরে ঘরে আগুন দিয়ে মজা দেখে এবং মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। এর ফলে সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ছাত্রজনতা এদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমন চালিয়ে যেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধদের মধ্যে কলিমুদ্দীন নামে এক পুলিশ ও একটি চাত্র নিহত হন। এই কুলিমুদ্দীনই সৈন্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমন পরিচালনা করছিল।

 পরদিন ৩০শে মার্চ তারিখেও এরা আগেকার মতই চারদিকে এলোপাতাড়ি আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। সেদিনও রাত্রিবেলায় তারা রেস্ট হাউসের উপর থেকে মর্টার শেল; বোমা ও রকেট ছুড়ে শহরের নানান জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। ফলে কিছু লোকও মারা য়ায়। কিন্তু ওরা অস্ত্রের দাপটে যতই প্রতাপ দেখাক না কেন; ওদের মনোবল ক্রইে কমে আসছিল। এই ক'টি দিনে ছাত্র ও সাধারন মানুয়ের আক্রমণের ফলে ওদের চল্লিশজন সৈন্য মারা গেছে। এমন যে হতে পারে এটা ওরা ভাবতেই পারেনি। এইভাবে যদি মৃত্যুর হার বেড়ে চলতে থাকে; তবে আর কিছু দিনের মধ্যেই সম্পূর্নভাবে বিনাশ হয়ে যেতে হবে। ওদের মনে ত্রাসের সঞ্চার হচ্ছিল বুঝতে পারছিল যে তারা ওদের সঙ্গে উঠতে পারছে না। তাই শেষ পর্যন্ত ওরা শহর থেকে পাত্তা গুটিয়ে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করল। তার পরদিনেই ওরা চোরের মত চুপিচুপি শহর ছেড়ে চলে গিয়ে রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্টের দিকে যাত্রা করল। ওরা যে পথ দিয়ে যাচ্ছিল তার চারদিকের গ্রামগুলিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে উঠেছিল।

 এই পলাতকের দল যখন কাটাখালিতে পৌছাল তখন স্থানীয় ছাত্ররা ওদের পথরোধ করার জন্য কাটাখালি পুলটাকে ভেঙ্গে ফেলতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওদের ভাগ্য ভাল সময়ের অভাবে ছাত্রেরা একটুর জন্য তাদের কাজটাকে শেষ করতে পারেনি।

 সৈন্যরা কাটাখালি থেকে মানে মানে প্রাণ নিয়ে সরে পড়তে পারল বটে; কিন্তু আরও কিছুদূর এগোবার পর ওদের বাধা পেয়ে থমকে দাড়াঁতে হোল। জায়গাটার নাম গোবিন্দগঞ্জ। এখানে বহু স্থানের ছাত্র আক্রমণমুখী হয়ে ওদের পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। কি দুঃসাহসী এই ছাত্রের দল। আগ্নেয়াস্ত্র বলতে অতি সামান্যই ওদের