পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৫৪

অনেক আওয়ামী লীগ কর্মীও এস গেছেন। সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক হোল, আমাদের প্রথম কাজ যোগাযোগের ব্যবস্থা বন্ধ করা। সেই অনুযায়ী বাঘাবাড়ীর ফেরী বন্ধ করার দায়িত্ব দিয়ে আবুল হোসেন চৌধুরীকে পাঠানো হোল। আমি উল্লাপাড়া ও তার পরবর্তী এলাকার কাজকর্ম তদারক করার জন্য মোটর সাইকেলযোগে সেদিকে রওনা দিলাম। উল্লাপাড়ার জনপ্রতিনিধি (এম-পি-এ) এলাকায় অনুপস্থিত থাকেন এবং রায়গঞ্জ থানার প্রতিনিধিও তাড়াশে থাকেন বিধায় ঐ এলাকার জরুরী দায়িত্ব পালক কর্তব্য মনে করে আমি ঐদিকে রওনা দিই। প্রথমে আমি সরাসরি রায়গঞ্জ থানায় যেতে চাই। কিন্তু ঐ এলাকার রাস্তার বড় বড় গাছ থাকায় রায়গঞ্জ থানা পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ার জন্য কিছু আওয়ামী লীগ কর্মীর সঙ্গে সমস্ত বিষয় আলোচনা করে কর্তব্য নির্ধারণ করে ফিরে আসি। উল্লাপাড়া থানার এসে সেখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কর্তব্য নির্ধারণ করে ফিরে আসি। আমার এই কয়েক ঘণ্টার সফরে জনসাধারণের যে আন্তরিকতা দেখেছি তার তুলনা হয় না।

 সম্ভব ২৯/৩০ মার্চ আমি বঙ্গবন্ধুর শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনামা পাই। আমি এটি অনুবাদ করার ও ছাপানোর ব্যবস্থা করি। ছাপানোর দায়িত্ব এককালীন কনভেনশন লীগ নেতা ও পার্লামেণ্টারী সেক্রেটারী ও পরবর্তী কালের জেলা শান্তি কমিটির প্রধান মৌলানা সাইফউদ্দিন ইয়াহিয়া সাগ্রহেই নিয়ে ছিলেন ও দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেছিলেন।

 এই সময়ে শাহজাদপুর স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করা হয়। শাহদাজপুরের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ কর্মীদের ও সরকারী কর্মচারীদের মিলিত সভায় সাতজন সদস্য সমবায়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। আমি ঐ সভায় সভাপতিত্ব করি এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদেরও সভাপতি নির্বাচিত হই। এই কমিটির সদস্যগণ ছিলেনঃ (১) জনাব আবদুর রহমান (এম,পি,এ)-সভাপতি (২) জনাব আবদুল লতিফ খান (৩) জনাব আবুল হোসেন চৌধুরী (৪) তাহাজ্জাদ হোসেন (অধ্যক্ষ) (৫) বাবু ননী-গোপাল সাহা (৬) সি- আই, পুলিশ ষ্টেশন, (৭) ও-সি, পুলিশ স্টেশন।

 শাহজাদপুরে স্বাধীনতা যুদ্ধের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব এই কমিটির উপর থাকলেও অন্যান্য অত্যন্ত জরুরী কাজের জন্য কয়েকটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়। খাদ্য সবরাহের দায়িত্ব দেওয়া ছিল ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় এম,এল,এ জনাব আবু মোহম্মদ ইউনুস সাহেবের উপর। টাকা-পয়সা সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল বাবু বিনোদবিহারী জোয়ারদারের উপর। প্রচারের দায়িত্ব ছিল জনাব আব্দুল গফুর সবরতের উপর।

 আমরা প্রথম থেকেই আমাদের অস্ত্রের অপ্রতুলতার কথা জানতাম। ইতিমধ্যে সংবাদ পেলাম যে বগুড়ার নির্মীয়মাণ ক্যাণ্টমমেণ্ট ওখানকার মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেছে। আমি রেড়ার জনপ্রতিনিধি এম-এন- এ জনাব আবু সাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উভয়ে কয়েকজন কর্মীসহ বগুড়া গেলাম। এটা এপ্রিলের ৪ তারিখ। ওখানে গিয়ে ঐদিন লোক ও অস্ত্র না পেয়ে আমাদের কর্মীদের চান্দাইকোনা রেখে আমি ও আবুল চৌধুরী ফিরে এলাম। এলাকার কাজের জন্য আমাকে ফিরে আসতে হোল। আমি ফিরে এসে নগরবাড়ী এলাকার প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা দেখতে গেলাম। কারণ ঐ সময় নগরবাড়ী রক্ষা করা না গেলে আমাদের বাঘাড়াবীতে রক্ষার প্রচেষ্টার কোন মানেই থাকবে না। নগরবাড়ীতে কোন জনপ্রতিনিধি না থাকায় আমার পক্ষে ঔ স্থানের কাজকর্ম বাদ দিয়ে আসা সম্ভব হোল না।

 নগরবাড়ীতে আমি নিয়োজিত থাকায় বগুড়াতে আমি না যেতে পেরে আবুল চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠালাম। সেখান থেকে আমাদের খুব সামান্য অস্ত্রই দেয়া হয়েছিল। যাই হোক নগরবাড়ীতে আমাকে এবং ক্যাপ্টেন (বর্তমানে মেজর) নজমুল হুদাকে সব সময় একসঙ্গে পরামর্শ করেই কাজ করতে হোত। পাবনা থেকে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা এসেছিল। আমি ও ক্যাপ্টেন হুদা প্রথমেই স্পীডবোট নিয়ে সমস্ত নদী এলাকা ঘুরে দেখলাম। দেখলাম যে, পাক-বাহিনী নগরবাড়ীতে সরাসরি না এসে নগরবাড়ীর ৮/৯ মাইল দক্ষিণ দিক দিয়েও