পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৮৯

 ইতিমধ্যে এপার বাংলার কাছে ওপার বাংলার তরুন ছাএদের আর্ত আবেদনঃ আমাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করুন। হলদিবাড়ি সীমান্তে গতকাল চারজন ছাত্রপ্রতিনিধি আসেন অস্ত্র সংগ্রহের জন্য।

 দিনাজপুর শহরে মুক্তিফৌজের শক্তিবৃদ্ধির জন্য সীমান্ত বাঙ্গালী ইপিআর সীমান্ত চৌকি ছেড়ে চলে গিয়েছে। দিনাজপুরের পথে পথে পশ্চিমী ফৌজ প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন। ঘোড়াঘাট ও হিলির মধ্যে পশ্চিমী ফৌজের একটি ট্রাক রাস্তায় ওপর একটি গর্তে পড়ে উলটে যায়। প্রচুর ফৌজ আহত হয়। হিলি এলাকায় ভারত-পাক সীমান্তের কাছে দুটি অবাঙ্গালী পশ্চিমী ফৌজের মৃতদেহ দেখা গিয়েছে। দুজন পশ্চিমী ফৌজ প্রানভয়ে ভারতের এলাকায় ঢুকে পড়ে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

 সোমবার মুক্তিফৌজের তাড়া খেয়ে প্রায় ২০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী সপরিবারে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। এরা ভারতীর সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করেছে।

 অন্যদিকে পশ্চিম দিনাজপুরের দিক থেকে আওয়ামী লীগের দুজন বিশিষ্ট নেতাও এপার আসেন। জলপাইগুড়ি শহরে এরা পৌঁছালে তাদের বিপুল সম্বর্ধনা জানানো হয়।

 পাকিস্তানী জাতীয় পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা মুহম্মদ আবিদ আলী বাংলাদেশে অবিলম্বে সাহায্যের জন্য আর্ত আবেদন জানিয়েছেন।

 হাসনাবাদ থেকেঃ সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা সীমান্তে খবর সাতক্ষীরা আদালত ভবন থেকে ক্রুদ্ধ জনতা পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে ফেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। সাতক্ষীরার পাঞ্জাবী মহকুমা শাসককে জনতা স্বগৃহে অন্তরীণ করে রেখেছে।

 সীমান্ত আজ মুছে একাকার হয়ে গেছে। এপার বাংলা থেকে দলে দলে মানুষ এসে সীমানার এপারে দাঁড়াচ্ছে। ওপারের মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছে মুখোমুখি। আজ আর কেউ কারও কাছে অপরিচিত নয়।

 সোমবার সীমন্ত পার হয়ে অনেকখানি ঢুকে গিয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে। কথা হল বহু মানুষের সঙ্গে। সকলের মুখে এক কথা, শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অস্ত্র দিন।

 অস্ত্র আর অস্ত্র। ওপার বাংলার মানুষ এপার বাংলার মানুষের কাছে আজ শুধু একটি জিনিসই চান। শুধু নৈতিক সমর্থন নয়, অস্ত্র না পেলে আমরা লড়ব কি করে। এই তাদের বক্তব্য।

 খুলনা থেকে দু’দিন হেঁটে আজই ফিরেছেন এমন একজনের সঙ্গে দেখা হল। সমস্ত রাস্তা বন্ধ। খুলনায় এখনও চলছে জোর লড়াই। সেখানে মুক্তিফৌজ ৪০০ পাঞ্জাবী সৈন্যকে নিহত করেছে। একটি তিনতলা বাড়ীতে কিছু পাঞ্জাবী সৈন্য আশ্রয় নিয়েছিল। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস তাদের ঘেরাও করে। সাদা পাতাকা উড়িয়ে পাঞ্জাবী সৈন্য আত্মসমর্পন করে।

 যশোর থেকে সদ্য প্রত্যাগত একটি যুবকের কথাঃ যশোরের পথে বেশীদূর এগুতে পারলাম না। পথে পথে মৃতদেহ। দূরে গুলির শব্দ ধোঁয়া আর ধোঁয়া।

 আগরতলা থেকেঃ গতকাল চট্টগ্রাম দখলদার সৈন্য অবতরণে অসামরিক জনগন বাধা দিলে তাদের ওপর জাহজের কামান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। ফলে বহু লোক মারা যায়।

 ইপিআর-এর ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে দখলদার ফৌজরা গ্রেফতার করেছে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের যেসব বাঙ্গালী ফৌজ ওই বাহিনী থেকে সরে আসতে পারেননি তাদের হয় গ্রেফতার করা হয়েছে অথবা নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে।