পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯৬

 আবার বোমাবর্ষণঃ মুক্তিফৌজের করতলগত ছোট ছোট শহরগুলি পুনদর্খলের জন্য পাক-সৈন্যরা তৎপর হয়ে উঠেছে। আজ বিকেলে পাক বিমান বাহিনী আবার বাংলাদেশের কয়েক স্থানে বোমা বর্ষণ করেছে। এইসব স্থানের নাম পাবনা, বগুড়া ও দিনাজপুর।

 সীমান্ত অঞ্চল থেকে এখানে প্রাপ্ত প্রকাশ, পাকিস্তানী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর মোতায়েনের জন্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে আধা-সামরিক বাহিনী (সীমান্ত স্কাউট ও রেঞ্জার্স) আমদানী করছে। মুক্তিফৌজ গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করায় পাকিস্তানীরা তাদের মোকাবিলা করার জন্য প্রচুর গেরিলা ট্রেনিংপ্রাপ্ত সৈন্য আমদানীর কথা বিবেচনা করছে।

 পাক-সৈন্যদের আত্মসমর্পণঃ রায়গঞ্জ (পঃ দিনাজপুর), ২রা এপ্রিল-সীমান্তের অপর পার থেকে গতকাল নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখানে প্রাপ্ত এক খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এখন দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, ময়মনমসিংহ ও শ্রীহট্ট সম্পূর্ণভাবে নিজ দখলে রেখেছে। ঐসব স্থানে পাক-সৈন্যরা বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করেছে এবং ঢাকা ও রাজশাহীতে এখনও তীব্র যুদ্ধ চলছে বলে ঐ সূত্র থেকে বলা হয়েছে।

 পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে গতকাল প্রাপ্ত এক সংবাদে প্রকাশ, পাক-সৈন্যরা ৩১শে মার্চ সন্ধ্যায় দিনাজপুর শহরে নিউ টাউন ও রাজবাড়ীতে পরাজিত হয়েছে। দিনাজপুর ও ফুলবারায় সৈয়দপুর থেকে যে সমস্ত পাক-সৈন্য এসেছিল, তারা হয় নিহত নয়তো বন্দী হয়েছে। রাজশাহী জেলায় চাপাইনবাবগঞ্জে যেসব সৈন্য পাঠানো হয়েছিল, তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত নয়তো বন্দী হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে যে, শ্রীহট্ট শহরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে এবং পাক-সৈন্যরা সেখানে আত্মসমর্পণ করছে।

 মৌলভীবাজারে ১৪০ জন পাক-সৈন্য নিহতঃ আগরতলা থেকে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে যে, শ্রীহট্ট জেলার মহকুমা সদর মৌলভীবাজারে যুদ্ধ চলছে এবং এখানে ১৪০ জন পাক-সৈন্য নিহত হয়েছে। শহরটি এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আছে। সংবাদে বলা হয়েছে যে, শ্রীহট্ট অবরুদ্ধ পাক-সৈন্যদের সাহায্য আরও সৈন্য প্রেরণের চেষ্টা চলছে। সৈন্যরা চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে।

 রংপুরে তুমুর লড়াইঃ শিলিগুড়ি, ৩রা এপ্রিল-সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও রংপুর পাক-সৈন্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই চলছে। সঈদপুর থেকে দিনাজপুর এই ২৪ মাইল এলাকায় অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে আছে। রংপুরের পাঁচ মাইলের মধ্যে কোন জনবসতি আছে বলে মনে হয় না। মুক্তিযোদ্ধারা এদিন একশো পাকসেনাকে খতম করে দিয়েছে। ক্যাপ্টন নোয়াজেশের নেতৃত্বে ওরা লড়াই করছেন। এখানে ইস্ট বেঙ্গল রাইফেলসের এক হাজার নতুন লোক এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

 কয়েদী মুক্তিঃ মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর জেলাটি মুক্ত করে দিয়েছে। এখানকার কয়েদীরা বেরিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়। এদের মধ্যে দু’জন ভারতীয় ছিল। এরা ভারতে পালিয়ে এসেছে বলে জনরব।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ এপ্রিল, ১৯৭১

উওরাঞ্চলের চারটি জেলা মুক্তিফৌজের দখলে

 দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও শ্রীহট্ট-বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এই চারটি জেলা সম্পূর্ণরূপে মুক্তিফৌজের দখলে এসেছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে শিলং-এ কাল খবর পৌঁছেছে। এই জেলাগুলোতে পাকিস্তানী সৈন্য সম্পূর্ণরূপে ক্যাণ্টনমেণ্ট এলাকার মধ্যে আটকা পড়েছে।

 এদিকে পাকিস্তানী সৈন্যরা চালনা থেকে খুলনা শহর পর্যন্ত মধুমতি সদীর দু’তীরে গানবোট থেকে গোলা ছুঁড়ে নির্বিচারে গ্রামবাসীদের হত্যা করছে। সরবরাহ পথ যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেই জন্যই এই মরণপণ চেষ্টা। বোমা বর্ষণে বহু লোক নিহত হয়েছে।