পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯৭

 পাক বিমান ধ্বংসঃ পাক বিমান বাহিনী বগুড়া ও শ্রীহট্ট থেকে মুক্তিফৌজকে হটিয়ে দেওয়ার জন্য কাল বোমা বর্ষণ করে। সোমবার রাত্রে রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্যাবারজেট বিমান ধ্বংস করে। এই বিমানটি একটি খাদ্যবাহী হেলিকপ্টারকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছিল।

 যশোর শহরেও তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে শহরটি পুনদর্খলের পর শহরটি যাতে আবার হাতছাড়া না হয় তার জন্য পাক সৈন্যরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে। এখনও হাজার হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামী যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট ঘেরাও করে রয়েছে।

 পাকিস্তানী বিমান বাহিনী কাল ময়মনসিংহ, নারায়নগঞ্জ, বগুড়া এবং রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করে। প্রায় একপক্ষকালীন যুদ্ধের সর্বশেষে যে সংবাদ পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে যে, স্থলপথে যাতায়াতের সমস্ত সংযোগস্থান মুক্তিফৌজের দখলে রয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, শ্রীহট্ট ও খুলনায় অবস্থিত পাক সৈন্যরা আত্মরক্ষার যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এক ডিভিশনেরও বেশী সৈন্য ঢাকায় নিযুক্ত করা হয়েছে এবং অবশিষ্টদের কুমিল্লা এবং যশোরের ক্যাণ্টনমেণ্ট শহরে হয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, যশোর, কুমিল্লা এবং ঢাকার সামরিক ঘাঁটিগুলি ছাড়া অবশিষ্ট এলাকাগুলি দখলে, নয়তো সেগুলিকে অব্যবহার্য করে দেওয়া হয়েছে।

 পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সন্নিকটে রংপুরে এবং সৈয়দপুরে আজও প্রচণ্ড লড়াই চলছে। রাজশাহীতে পাক সৈন্য মুক্তিফৌজের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়েছে। আরো সৈন্য ও রসদ আমদানীতে মুক্তিফৌজ বাধা সৃষ্টি করছে।

 সমগ্র খুলনা জেলা মুক্তঃ খুলনা শহর এবং ক্যাণ্টনমেণ্ট এলাকায় পাক সৈন্যর ওপর মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। জেলার অন্যান্য সমস্ত অঞ্চলই এখন মুক্ত। মুক্তিফৌজ যশোর এবং খুলনায় মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তাটি নষ্ট করে দেওয়ার প্রায় এক ব্রিগেড পাকিস্তানী সৈন্য বেষ্টিত হয়ে পড়েছে।

 কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ মুক্তঃ সংবাদে প্রকাশ, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ সম্পূর্ণ মুক্ত করা হয়েছে। পল্লী অঞ্চল মুক্তিফৌজের সম্পূর্ণ দখলে রয়েছে। শ্রীহট্ট ও কুমিল্লা শহরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।

-যুগান্তর, ৫ এপ্রিল, ১৯৭১

 বাংলাদেশ-পূর্ব রণাঙ্গনঃ পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ ৪৮০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ ঢাকা-শ্রীহট্ট রেলপথটি নানা জায়গায় বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে শ্রীহট্ট শহরে অবরুদ্ধ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে ঢাকা থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ পাঠানো অসম্ভব করে তুলেছে। সোমবার শ্রীহট্ট খণ্ডে জোর লড়াই চলেছে।

 মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড লড়াই চালিয়ে শ্রীহট্টের শালুটিকর বিমানক্ষেত্রটি দখল করেছে। ময়মনসিংহ মুক্তিফৌজের হাতে। সংলগ্ন নতুন জেলা টাঙ্গাইলের অবস্থাও তাই। মুক্তিফৌজ কুমিল্লা শহরও দখল করেছে। পাক ফৌজ শহর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে ময়নামতী ক্যাণ্টনমেণ্টে।

 বাংলাদেশ-পশ্চিম রণাঙ্গণঃ পশ্চিম রণাঙ্গনের কুষ্টিয়ায় সোমবার প্রচণ্ড লড়াই চলছে। যশোহরের চাচড়ার মোড় পুনর্দখলের জন্য জোর লড়াই শুরু হতে চলেছে। খুলনায়ও চলছে উভয়পক্ষে মরণপণ সংগ্রাম।

 বাংলাদেশ-উত্তর রণাঙ্গণঃ সোমবার উত্তর রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ একটি সাফল্য অর্জন করেছে-তারা হানাদার বাহিনীর হাতে রংপুর শহরটি ছিনিয়ে নিয়েছে, তিস্তা সেতু উড়িয়ে দিয়েছে, লালমনিরহাট বিমানক্ষেত্র অকেজো করে দিয়েছে। সামরিক দিক থেকে এ সাফল্যের তুলনা নেই। মুক্তিফৌজ তিস্তা সেতু উড়িয়ে দিয়ে