পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪১৬

সমৃদ্ধ গ্রামটিতে পাকফৌজ যথেচ্ছ লুটতরাজ ও অগ্নিকাণ্ড চালিয়েছে। এদিন ভোর তিনটের ক্যাপ্টন গাফ্ফারের নেতৃত্ব মুক্তিফৌজ অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে দেড়শ শত্রুসৈন্য নিহত করে অঞ্চলটি দখল করে নিয়েছেন। ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ মন্ত্রী তফাজ্জল আলীর বাড়িতে পাকফৌজ থানা গেড়েছিল। মুক্তিবাহিনী সেই বাড়িটিও উড়িয়ে দেন। এই শহরের বাড়িতে বাড়িতে যে পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানো হয়েছিল স্বাধীন বাহিনীর সেনারা সেই সব পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। সমস্ত গ্রামবাসীরাও আবার আস্তে আস্তে এখানে ফিরে আসছে।

 আখাউড়া রেল স্টেশনের কাছেও প্রবল যুদ্ধ চলছে। এখানে দখলদার বাহিনীরাই ফাঁদে আটকা পড়ার অবস্থা। আগরতলা থেকে দশ মাইল দূরে সিঙ্গুর বিল সেতুটি মুক্তিফৌজ উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও পাকফৌজ কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন।

 হার্ডিঞ্জ বা সারা সেতু এলাকায় লড়াই এখন তুমুল। ফেনীর কাছে এক আকস্মিক সংঘর্ষ দেড়শত পাকফৌজ নিহত হয়েছে। এখানে পাক বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ করেছে বিস্তর। রংপুর লালমনিরহাটের মধ্যে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগের ব্যবস্থাও আজ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মুক্তিফৌজের তৎপরতায়। ঢাকা শহরের আশেপাশে এবং টাঙ্গাইলেও অবিরাম লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।

 আজ পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলি বস্তুত জনশূন্য। সেনাবাহিনী অধিকৃত খুলনা বেতার কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, এই শহরের প্রায় তিন হাজার অধিবাসী গ্রামে চলে গেছেন।

 রংপুর অঞ্চলে ঠাকুগাঁও ও দিনাজপুর থেকে উত্তর অগ্রসরমান একটি পাক বাহিনীকে মুক্তিফৌজ প্রবলভাবে বাধা দেয়।

- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০ এপ্রিল, ১৯৭১

বাংলাদেশে লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্যায়

মুক্তিফৌজের সাঁড়াশী আক্রমণে পাকবাহিনী পর্যদস্ত

 ২১শে এপ্রিল-গতকাল বিকেলে বাংলাদেশে লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। এতদিন যা হচ্ছিল, তা হল মুক্তিফৌজ কর্তৃক পাকিস্তানী সৈন্যের প্রতিরোধ করা এবং তা ছিল একরকম বিচ্ছিন্নভাবেই। অর্থাৎ মুক্তিফৌজ তেমন সংগঠিত ছিল না। বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে যুদ্ধনীতি অনুযায়ী সমঝোতাও ছিল না। কিন্তু গতকাল থেকে মুক্তিফৌজ পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত হয়ে যুদ্ধনীতি অনুযায়ী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মুক্তিফৌজের সংগ্রামীরা অনেক অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তাদের প্রথম পাল্টা পশ্চিম সেক্টর থেকেই শুরু হল এবং ক্রমে অন্যান্য সেক্টরও এই পাল্টা আক্রমণ আরম্ভ হবে।

 গতকাল বিকেলেই মুক্তিফৌজ বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী বুড়িপোতা, গবীপুর ও দৌলতপুর দিয়ে তিন পথে এক সঙ্গে সাঁড়াশী আক্রমণ চালিয়েছে। এই সাঁড়াশী আক্রমণের উদ্দেশ্য হলমেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল দখল করা এবং মেহেরপুর থেকে সাত মাইল দূরে আমঝুপিতে পাকসৈন্য যে ঘাঁটি স্থাপন করেছে তাকে দখল করা এবং যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট দখল করা। আজ সকাল পর্যন্ত খবর নিয়ে জানা গেছে যে, মুক্তিফৌজ ইতিমধ্যেই কোর্ট এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং মুক্তিফৌজের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হটতে শুরু করেছে এবং পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। মুক্তিফৌজের জনৈক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

 মুজিবনগর আক্রমণের চেষ্টা ব্যর্থঃ এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানী সৈন্যরা মুজিবনগর আক্রমণের চেষ্টা ও পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বিকেল থেকে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় এবং রাস্তাঘাট চলাচলের পক্ষে সুবিধাজনক না হওয়ায় পাকবাহিনীর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়।