পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২৪

বিভিন্ন সেনাঙ্গনে মুক্তিসেনাদের আচমকা আক্রমণ

 কলকাতা, ৭ মে (ইউএনআই)- সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রনাঙ্গনে মুক্তিফৌজের পক্ষ থেকে কমাণ্ড আক্রমণে প্রায় ১৫ জন পাক ফৌজ খতম হয়েছে। এরমধ্যে ময়মনসিংহে কালুমাখানায় পাকবাহিনীর আচমকা আক্রমণ করে কমাণ্ডোরা ৮ জনকে হত্যা করে এবং ৩০ টি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়।

 এর পরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে রংপুরে। এখানে সরাই নামক স্থানে মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে অন্ততঃ ৭ জন সৈন্যকে হত্যা করে।

 শ্রীহট্ট অঞ্চলের বিবির বাজার ও কাজিপুরে জোড় সংঘর্ষ হয়। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 সেতু ধ্বংসঃ রংপুরের আমরখানা, মোগলাহাট, লাবলাহাট ও তুগরাইহাট অঞ্চলে মুক্তিফৌজ গেরিলা আক্রমণ চালিয়েছে। তারা ঐ জেলার বাজানপুর সেতুটি ধ্বংস করে দেয়। দক্ষিন -পূর্ব রনাঙ্গনের রাদমপুর ও বরিশালের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পটুয়াখালির অঞ্চলে ও এখানে সেখানে যুদ্ধ চলছে।

 উত্তর রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের সাফল্যঃ জলপাইগুড়ি থেকে যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিনিধি জানাচ্ছেঃ মুক্তিফৌজ বিগত ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর রনাঙ্গনে নেকীপাড়া, ডানাকাটা এবং বড়শশী সীমান্ত ফাঁড়িগুলি দখল করে নিয়েছেন। তারা ভালাগঞ্জ থেকে পচাঁগড় পর্যন্ত ২০ ব্যাসার্ধের মধ্যে পাক সৈন্যদের চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে। বহুসংখ্যক মুক্তিফৌজ এখন তেঁতুলিয়ায় গেরিলা যুদ্ধে ট্রেনিং নিচ্ছেন।

প্রখ্যাত খেলোয়াড়ের মুক্তিফৌজে যোগদান

 নয়াদিল্লী, ৭ই মে (ইউএনআই) এখানে প্রাপ্ত এক সংবাদে প্রকাশ, বাংলাদেশের খ্যাতনামা ফুটবল খেলোয়াড় ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমদ মুক্তিফৌজে যোগ দিয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশর কোন এক স্থানে মুক্তিফৌজের সঙ্গে আছেন। ক্যাপ্টেন আহমদ মুক্তিফৌজে যোগ দেওয়ার জন্য পাকিস্তান বাহিনী ত্যাগ করেছেন।

আখাউড়ায় প্রচণ্ড লড়াইঃ ১৫০ পাক সেনা নিহত

 আগরতলা, ৮ মে শনিবার সারাদিন ধরে বাংলাদেশের নানাস্থানে মুক্তিফৌজ ও পাক হানাদারদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলে। লড়াই সবচেয়ে তীব্র আকার ধারন করে আখাউড়ায়। এখানে মুক্তিফৌজের আক্রণে ১৫০ পাক- সেনা নিহত হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম রনাঙ্গনে মুক্তিফৌজ বারবার অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। মুক্তিফৌজের একজন কমাণ্ডার জানান, উত্তর- পূর্ব রনাঙ্গনে তারা চীনা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। চীনা পদ্ধতি হলঃ শত্রুকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে সীমাবদ্ধ অঞ্চলে আবদ্ধ রাখা।

 পশ্চিম রণাঙ্গনের রংপুর, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলার শনিবার উভয় পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই চলে। রাজশাহী জেলার মোহনপুরে চারজন পাক-সেনা নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, নতুন কায়দায় যুদ্ধ শুরু করে মুক্তিফৌজ গেরিলা বাহিনী সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে পাক বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। গত দু’দিন নানা স্থানে রেল লাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

 রংপুর জেলার মোগলহাটে ৩০ জন ও কুড়িগ্রামে ৭ জন পাক- সেনা গতকাল মুক্তিফৌজের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে রিজভি নামে একজন পাক-ক্যাপ্টেনও আছে। কুড়িগ্রামে মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর