পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬৪

সাহায্য দিলেন স্কুল শিক্ষক আমজাদ হোসেন। গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় ঢাকা থেকে হাসপাতালের জন্য ওষুধ ও অস্ত্রোপাচারের যন্ত্রপাতি আমদানি করা হলো। রোগীদের আরামের জন্য হাসপাতাল বেডের উপর কেরোসিনচালিত দুইটি পাখা টাঙিয়ে দেওয়া হলো। এমনি করে ২০ বিছানার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল গড়ে উঠলো। আর রোগীদের সেবার সার্বিক দায়িত্ব নিলেন হামিদ সাহেব। হাসপাতাল ছাড়াও প্রত্যেকটি কোম্পানীতে একজন করে ডাক্তার রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

 সদর দফতরের নিরাপত্তা রক্ষা: সদর দফতরের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হলো। নৌবাহিনীর প্রাক্তন সৈনিক খলিলুর রহমানের অধিনায়কত্বে ১৩নং কোম্পানী ক শাখাকে এই দফতরের তদারকির ভার দেওয়া হয়। সদর দফতরের কাছেই ছিল অধিনায়ক খলিলের বাড়ী। সর্বাধিনায়ক সিদ্দিকীর বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে তার কর্তব্যপরায়ণতা ছিল পরীক্ষিত। তার কোম্পানীর আর একটি প্লাটুনকে সদর দফতরের বেসামরিক বিভাগের রক্ষণায় নিয়োগ করা হয়। এই প্লাটুনের কমাণ্ডে দেওয়া হয় কালিহাতী ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাককে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে যে সব বেপরোয়া তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আরামকে হারাম করে ও রাতের ঘুম ত্যাগ করে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সদর দফতরের নিরাপত্তা রক্ষা করেছিল তাদের মধ্যে ঢাকা কলেজের সানু, কালিহাতির মান্নান, শহীদ সালু, পাহাড়িয়া উপজাতীয় ছেলে লক্ষণ চন্দ্র বর্মণ ও কচুয়ার আবদুল্লাহর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

আফসার ব্যাটালিয়ন

 ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার নিভৃত পল্লী মল্লিকবাড়ী গ্রামে একটি মাত্র রাইফেল নিয়ে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ সাহেব পার্টি গঠন করেন। পাকবাহিনী ও দুস্কৃতকারীগণের সাথে লড়াই করে মেজর আফছার সাহেব শত্রুদেরকে সমুচিত শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি তার পার্টি নিয়ে শত্রু পক্ষের নিকট থেকে আড়াই হাজরেরও অধিক রাইফেল, ব্রেটাগান, রকেট লান্সার, স্টেনগান, এমএমজি ইত্যাদি উদ্ধার করেন। তার দ্বারা পরিচালিত বাহিনীতে সর্বমোট প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল।

 মেজর আফছার সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতায় আফছার ব্যাটালিয়নের তরফ থেকে সাপ্তাহিক জাগ্রত বাংলা পত্রিকা যাবতীয় সংবাদ পরিবেশন করে মুক্তিকামী মানব মনে প্রেরণা জুগিয়েছে।

 আফছার ব্যাটালিয়নের তরফ থেকে রোগাক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং বিপর্যস্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য ১৩ জন ডাক্তার ও ৩ জন নার্স সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছিল মেজর আফসার সাহেবের প্রচেষ্টায়। আফছার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মুক্ত এলাকার সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা কয়েম করা হয়েছিল। এই শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে আফছার ব্যাটালিয়ন তাদের দ্বারা মুক্ত এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে।

 মেজর আফছার সাবের কর্তৃক পরিচালিত মুক্তিবাহিনীকে সেনাবাহিনীর নিয়মানুযায়ী মোট ২৫টি কোম্পানী অর্থাৎ ৫টি ব্যাটালিয়নের ভাগ করা হয়। প্রত্যেক কোম্পানীতে ৩টি প্লাটুন, প্রত্যেক প্লাটুনে ৩টি সেকশন এবং প্রত্যেক সেকশনে ১৫ জন করে মুক্তিসেনা ছিল। প্রকাশ থাকে যে হাসপাতাল, পত্রিকা অফিস এবং বার্তা বিভাগের মুক্তিযোদ্ধারা কোম্পানীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।

 ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) ও ঢাকা সদর (উত্তর) সেক্টরের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আফসার ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়েছিল। আফছার ব্যাটালিয়নের কৃতিত্বের কথা এ পুস্তক তুলে ধরা হয়েছে। আফছার ব্যাটালিয়নের প্রত্যক মুক্তিযোদ্ধাই এই কৃতিত্বের অংশীদার।

 স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্ষীবাহিনী এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। রক্ষীবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম, অকৃত্রিম সেবাযত্ন এবং অসীম ভালোবাসার উপর ভিত্তি করেই আফছার ব্যাটালিয়ন সফলতার চরম শিখরে