পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬৫

আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বাটাজুর, কচিন, ডাকাতিয়া, পাঁচগাও, কাওলামারী, রাজৈ, ফুলবাড়িয়া, আমিরাবাড়ী, নারাঙ্গী, বড়ইদ, দক্ষিণ ফুলবাড়ীয়া ও কালিয়াকৈর এলাকার রক্ষীবাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ভূমিকা পালন করেছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাতবে।

 ....পাকবাহিনী কর্তৃক হামলার প্রথমাবস্থায় মুক্তিকামী বাঙ্গালী নওজোয়ানগণ (প্রাক্তন ই,পি,আর বেঙ্গল রেজিমেণ্ট, পুলিশ বাহিনী, আনসার, মুজাহিদ ও অন্যান্যরা)। বীরবিক্রমে পাল্টা আক্রমন চালান, কিন্তু পাকবাহিনীর মত সুসংগঠিত বর্বর বাহিনীর সাথে টিকে ওঠা সম্ভব না হওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বন্ধু রাষ্ট্রে আশ্রয় নেন।

 মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য জীবন-মরণ পণ করে অগনিত বাঙ্গালী নওজোয়ান অপর বাংলার সামরিক শিক্ষা গ্রহন শুরু করে। মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেব অপর বাংলার পাড়ি না জমিয়ে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন, বর্বর বাহিনীর আক্রমন প্রতিহত করে এক বিরাট এলাকা মুক্ত করেন। একই সময়ে টাঙ্গাইল জেলার কাদের সিদ্দিকী সাহেবও দেশের অভ্যন্তরে পার্টি গঠন করেন এবং এক বিরাট এলাকা মুক্ত করার প্রয়াস পান।

 ......ওপর বাংলা থেকে মুক্তিদ্ধোরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার বেশ কিছুদিন আগেই পাকবাহিনীর নিকট থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে এনে মেজর আফছার উদ্দিন তাঁর পরিচালিত মুক্তিদলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সনের জুন মাসে ভালুকা থানার ভাওয়ালিয়া বাজু এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে একটানা ৪৮ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ করে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি অগণিত সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তাঁর অসীম কর্মদক্ষতার গুণে তিনি একটি রাইফেল থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও অধিক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী ভেঙ্গে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা সুষ্টভাবে পরিচালনা করেন।

 তিনি শপথ করেছিলেন- “দেশকে শত্রুমুক্ত না করা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবো না। আমার যদি মৃত্যু হয় তাহলে যেন মুক্ত এলাকেতেই হয়।' বর্বর বাহিনী শত চেষ্টা করেও আফছার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মুক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। আফছার সাহেব শপথ করেছিলেন, “জীবিত থাকতে মুক্ত এলাকায় শত্রুদেরকে প্রবেশ করতে দেব না।' তাঁর শপথ অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করেছেন। তিনি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জাগ্রত বাংলা'য় তাঁর বাহিনী কর্তৃক মুক্ত এলাকার মানচিত্র অংকন করে সমস্ত বাংলাদেশ, ওপার বাংলা ও পাক বাহিনীর অনেক ঘাঁটিতেও বিতরণ করেছেন। তিনি ১৯৭১ সনের আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি আগরতলা যেয়ে লেঃ কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। লেঃ কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেব বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অস্ত্র ও অসীম উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে বিশেষভাবে উপকৃত করেন।

 ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) সেক্টরের মুক্তিবাহিনী অধিনায়ক মেজর আফছার উদ্দিন আহমেদের গঠিত ব্যাটালিয়নের স্বাধীনতা সংগ্রামের কার্যাবলীঃ

 ২৩-৪-৭১ ময়মনসিংহ জিলার ভালুকা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মল্লিকবাড়ী ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য জনাব আফছার আহমেদ মাতৃভূমিকে পশ্চিমাদের কবল হতে শোষণমুক্ত করার উদ্দেশ্য ভালুকা থানার রাজৈর গ্রামের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ কর্মী মোঃ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ সাহেবের নিকট থেকে একটি রাইফেল ও ৩০ রাউণ্ড গুলি নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করার সিদ্ধান্ত করেন। ২৪-৪-৭১- প্রাক্তন ই,পি, আর বাহিনীর ফেলে যাওয়া ৭টি রাইফেল এবং উপরোক্ত আবদুল হামিদ সাহেবের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ১টি রাইফেল মোট ৮টি রাইফেল নিয়ে জনাব আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ি এলাকায় ১। মোঃ আমজাদ হোসেন ২। মোঃ আবদুল খালেক ৩। শ্রীনারায়ণ চন্দ্র পাল ৪। মোঃ আবদুল বারেক মিয়া ৫।