পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩২

তিনি? একটি করে বিবৃতি লেখেন আবার তা ছিঁড়ে ফেলেন। কি জানাবেন তিনি বিশ্ববাসী এবং দেশবাসীকে বেতার মারফৎ? এদিকে বেতার কর্মীরা বারবার ঘোষণা করছিলেন- আর পনের মিনিটের মধ্যে মেজর জিয়া ভাষণ দেবেন। কিন্তু পনের মিনিট পার হয়ে গেল। মেজর জিয়া মাত্র তিন লাইন লিখতে পেরেছেন। তখন তার মানসিক অবস্থা বুঝাবার নয়। বিবৃতি লেখার ঝুঁকিও ছিল অনেক। ভাবতে হচ্ছিল শব্দচয়ন, বক্তব্য পেশ প্রভৃতি নিয়ে।

 প্রায় দেড় ঘণ্টা মোসাবিদার পর তিনি তৈরী করেন তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি। নিজেই সেটা তিনি বাংলা এবং ইংরেজীতে পাঠ করেন।

 ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত কালুরঘাটে থেকে তাঁরা চট্টগ্রামের যুদ্ধ চালিয়ে যান। তাঁদের সাথে যুদ্ধে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো ২০তম বালুচ রেজিমেণ্ট, কুমিল্লা থেকে নিয়ে যাওয়া ৫৩-ব্রিগেড। আর নিশ্চিহ্ন হয়েছিলো কমাণ্ডো, যারা অবাঙ্গালীদের ঘরে ঘরে ঘাঁটি গেড়েছিল।

 এদেরকে ছাড়াও চট্টগ্রামের এই যুদ্ধে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে লাগানো হয়েছিলো কোয়েটা থেকে নিয়ে আসা ১৬শ ডিভিশন ও প্রথম কমাণ্ডো ব্যাটালিয়নকে।

 ৩০শে মার্চ সকালে মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র) থেকে আর এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কমাণ্ডার ঘোষণা করেন।

 এই দিনই দুটি পাকিস্তানী বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করে বেতার কেন্দ্রটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

 ১১ই এপ্রিল কলুরঘাট এলাকা থেকে অবস্থান সরিয়ে নেয়ার পর যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায়। এ যুদ্ধ চলে রামগড়, রাঙ্গামাটি এলাকায়। যুদ্ধ চলে কক্সবাজারের পথে, শুভপুরে। যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই দলে দলে জনসাধারণ বিশেষ করে ছাত্ররা এসে যোগ দিয়েছে বাহিনীতে। অস্ত্র ধরেছে, ট্রেনিং নিয়েছে, বীরত্বের সাথে লড়াই করেছে।

 ৩০শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাবার পর ৩রা এপ্রিল রাত সাড়ে ন’টায় পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন একটি গোপন এলাকা থেকে চালু করা হয় আর একটি বেতার কেন্দ্র। ‘আমার সোনার বাংলা’ দিয়ে করা হয় এই কেন্দ্রের উদ্ধোধন। এই গানটি গাইবার জন্যে সে রাতে সেখানে এসেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের তদানীন্তন পুলিশ সুপার জনাব রহমানের তিন মেয়ে।

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টাল সেণ্টারের ঘটনা ও প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ মেজর এনামুল হক চৌধুরী[১]

৭-১১-১৯৭৩

 ২৪শে মার্চ ব্রিগেডিয়ার মজুমদার, কর্নেল হামিদ হোসেন শিগরী, ক্যাপ্টেন মোহসিন (এডজুট্যাণ্ট) চট্টগ্রাম বন্দরে ‘এম, ভি, সোয়াত’ জাহাজের অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ খালাসের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য এক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিতে চলে যান। আমাকে নির্দেশ দিয়ে যান ব্রিগেডিয়ার আনসারী, হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে আসার পর তাঁকে জীপযোগে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়ে দিতে।


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত।