পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২

 ২৫শো মার্চ ব্রিগেডিয়ার আনসারী আমাদের সি-ওকে নির্দেশ দিলেন যে আমরা যেন ব্যারিকেড পরিষ্কার করি। “অল ব্যারিকেডস মাস্ট বি ক্লিয়ার এ্যাট এনি কষ্ট” - এটা ব্রিগেডিয়ার আনসারীর ম্যাসেজ ছিল। এ্যাট এনি কষ্ট শব্দটার উপর আমাদের সি-ও খুব এ্যামফ্যাসিস করছিলেন। ষোলশহর রেলক্রসিং এর উপর ওয়াগন দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছিল। ঐ ব্যারিকেড সরাতে পুরো একটা কোম্পানী ডিটেইল করা হল। সুবেদার খালেককে বললাম। যে এ ট্রেনের ওয়াগন যেন বিকেল চারটার আগে সরানো না হয়। কমাণ্ডিং অফিসার আমাদের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদেরকে ডেকে ঐ ওয়াগনগুলোর ঢাকা ব্রেক ভাঙ্গতে শুরু করলেন। জনসাধারন খুব হৈ হুল্লোড় করছিল। বিকেল পর্যন্ত ঐ ব্যারিকেড সরানো হল। বায়েজীদ বোস্তাম পর্যন্ত সমস্ত ব্যারিকেড পরিস্কার করতে নির্দেশ দেয়া হল। আমরা আশা করছিলাম যে আওয়ামী লীগ হাই কমাণ্ড থেকে কোন নির্দেশ পাব। আমি মেজর রফিকের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করি। তিনিও বললেন যে কোন নির্দেশ তিনিও পাননি। তিনিও প্রস্তুত আছেন।

 আমরা ব্যারিকেড পরিস্কার করতে গেলাম। ২৫শে মার্চ রাত ৯টা নাগাদ সমস্ত ব্যারিকেড পরিস্কার করা হল। জনসাধারণ আমাদেরকে খুব বাধা দিচ্ছিল। “আপনারা এসব করবেন না। আপনাদেরই ক্ষতি হবে।” জনসাধারন এসব বলছিল। আমরা বললাম যে আমাদের নিজেদের ইচ্ছায় আমরা কিছু করছি না। আমরা শুধু নির্দেশ পালন করছি। তদুপরি অন্য কোন নির্দেশও আমরা পাচ্ছি না। কমাণ্ডিং যে কোন উপায়ে হোক ব্যারিকেড ক্লিয়ার করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন।

 ষোলশহর থেকে বায়েজীদ বোস্তামী পর্যন্ত ডিউটি দেবার জন্য আমাদের উপর নির্দেশ দেয়া হল। আমরা যখন ডিউটি করছিলাম। তখন বালুচ রেজিমেণ্টের ৫টা গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে ক্যাণ্টনমেণ্টের দিকে চলে গেল। ঐ সব গাড়ীতে গোলাবারুদ ও এমুনিশেনও ছিল।

 রাত সাড়ে এগারটায় লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল জানজুয়ার সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে মেজর জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম পোর্ট এ ডিউটি করতে খবর দিতে বললেন। তিনি জিয়াউর রহমানের স্ত্রীকে বলতে বললেন যে ভয়ের কোন কারন নাই। জিয়াউর রহমান ২৬শে মার্চ সকালে চলে আসবে।

 রাস্তায় ছেলেরা একটা গর্ত করেছিল। সেই গর্তটা ভরাট করতে আমাকে বলা হল। আমি জিয়াউর রহমানের স্ত্রীকে এ খবর বললাম। জিয়াউর রহমানকেও এ খবর জানালাম।

 রাত বারটায় আমি ষোলশহর ক্যাণ্টনমেণ্টের গেটে গেলাম। সেখানে গিয়ে গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম। বৃষ্টির মত গুলি হচ্ছিল। ক্যাপ্টেন অলিকে টেলিফোনে জানালাম যে ক্যাণ্টনমেণ্টের ভিতরে ভীষণ গোলাগুলি হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না সেখানে ঠিক কি হচ্ছে। ক্যাপ্টেন অলি আমাকে সঠিক খবর নেবার চেষ্টা করতে বললেন এবং তাকে জানাতে বললেন। এমন সময় কিছু বাঙ্গালী সৈন্যকে গেটের দিকে আসতে দেখলাম। তারা আমাকে বললেন যে, স্যার বেলুচ রেজিমেণ্ট আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং আমাদের অনেককে মেরে ফেলেছে। কর্নেল এম, আর, চৌধুরীকেও (ই-বি-আর-সি চীফ ইন্সট্রাক্টর) মেরে ফেলেছে। আমি সংগে সংগে তাদেরকে গাড়িতে উঠালাম এবং আমার সাথে ষোলশহরে এইটথ বেঙ্গলে নিয়ে আসলাম।

 এইটথ বেঙ্গল-এ এসে শুনলাম যে সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসারদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেজর জিয়াউর রহমানের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে আমার দেখা হয়। তিনি বললেন যে এখন থেকে তিনিই হচ্ছেন ব্যাটালিয়নের কমাণ্ডিং অফিসার। তিনি আরো বললেন যে গোলাগুলির খবর তিনি শুনেছেন। এ খবর শোনার পর তিনি ব্যাটালিয়ন এর কমাণ্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল জানজুয়াসহ অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসারদের গ্রেফতার করেছেন। পরে ওদের সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছিল। তারপর মেজর জিয়াউর রহমান আমাকে ব্যাটালিয়ন এর সবাইকে এক জায়গায় একত্রিত করতে বললেন। সবাইকে এক জায়গায় একত্রিত করা হল। তার পর মেজর জিয়াউর রহমান টেবিলের উপর উঠে বক্তৃতা করলেন। তিনি