পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১৩৪

কদমবাড়ী, আনন্দপুর, বেদভিটা, মাদুকান্দি, আড়ুয়াকান্দি, তৈলীভিটা, বৌলতলী, রঘুনাথপুর, গোলাবাড়িয়া এলাকায় পাক সেনারা গণহত্যা চালায়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে কেবল সাতপাড়া গ্রামে ১০৩ জন, ভেন্নাবাড়ী গ্রামে ১৩২ জন লোককে হত্যা করা হয়। তাছাড়া কদমবাড়ীতে ৮ জন, আনন্দপুরে ৫ জন, বেদভিটায় ১২ জন, মাদুকান্দিতে ৪৫ জন, আড়ুয়াকান্দিতে ২ জন, তেলীভিটায় ৭ জন, বৌলতলীতে ১০ জন, রঘুনাথপুর ১৪৪ জন এবং গোলাবড়িতে ১৫০ জনকে পাকসেনারা হত্যা করে। এদের অধিকাংশকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাচ্চাদের তারা আছাড় মেরে বা বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে।

 দিন দিন আমাদের বাহিনীর অবস্থার অবনতি ঘটাতে থাকলে আমরা বেশ কয়েকজন উন্নত অস্ত্র এবং ভারতের সাহায্যের আশায় জুলাই মাসের ২য় সপ্তাহে ভারতাভিমুখে যাত্রা শুরু করি। সাতদিন পথ চলার পর অষ্টম দিন ভারতে পৌঁছি। ভারতের বালেশ্বপুর, ব্যারাকপুর পলতাতে অবস্থান করি। কয়েকদিন পর মুজিবনগরে যাই এবং মুজিবনগরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এরপর ঠাকুর নগর সলট লেক, হাসপুর, গয়া, হেলেঞ্চা, খড়েরমাঠ প্রভৃতি স্থানের শরণার্থী শিবিরে সেবাকার্যে আত্মনিয়োগ করি। ’৭২-এর মার্চের দিকে আমি দেশে ফিরে আসি।

শ্রীমতি কণিকা বিশ্বাস
জাতীয় সংসদ সদস্যা
(ফরিদপুর, সংরক্ষিত আসন)
৬ জুন, ১৯৭৩


কাজী জাফর আহমদ

 ১৯৭১ সালে প্রকাশ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে আমরা মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও কৃষক সমিতি এবং আমাদের সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলা শ্রমিক ফেডারেশন ও পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি ছিলাম বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি। আমাদের মূল সংগঠন ছিল ‘কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি’। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী আমরা এই গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। সে বৎসরেরই এপ্রিলে আমরা স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচী পেশ করি। এতে পরিকল্পিত রাষ্ট্রকে ‘পূর্ব বাংলা জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ আখ্যা দেয়া হয়। ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ঢাকার পল্টন ময়দানে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) আয়োজিত এক সভায় অতিথি বক্তা হিসেবে আমরা এই কর্মসূচীর ভিত্তিতে রচিত ১১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করি। এই অভিযোগে পাকিস্তানের সামরিক আইনের অধীনে আমাকে এবং রাশেদ খান মেননকে সাত বৎসরের সশ্রম কারদণ্ড ও সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ দেয় হয়, মোস্তফা জামাল হায়দার ও মাহবুব উল্লাহকে দেয়া হয় এক বৎসরের কারাদণ্ডাদেশ। আমরা আত্মগোপনে চলে যাই, অবশ্য মাহবুব উল্লাহ পরবর্তীকালে গ্রেফতার হন।

 ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আমরা বিরোধিতা করি। এর কারণ আমরা তখন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানে আর বিশ্বাস করতাম না, তদুপরি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবননাশী নভেম্বরের জলোচ্ছ্বাস এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের ক্ষমার অযোগ্য উপেক্ষায় আমরা ছিলাম বিক্ষুব্ধ। অন্যদিকে ইয়াহিয়া ঘোষিত ‘লীগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারে’র অধীনে নির্বাচন এবং এতে বিজয় পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করতাম না। তাই আমরা নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই এবং পাশাপাশি শ্লোগান তুলে ধরিঃ ‘শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা অস্ত্র ধরো, পূর্ব বাংলা স্বাধীন করো”। মওলানা ভাসানীও নির্বাচন বর্জন