পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১৯৫

বলেন যে তিনিও কিছু ছেলেকে ট্রেনিং দিচ্ছেন এবং আমাকেও এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। ..... খবর নিয়ে জানা যায় যে জেলা সদর দপ্তরে বি,ডি,আর ক্যাম্প আছে এবং সেখানে প্রচুর অস্ত্র আছে। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি।

 তারা আমাদের জানান যে, কোনভাবে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র নেয়ার চেষ্টা করলে তারা শুধুই দেবেনই না বরং সংগ্রামেও যোগদান করবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের ওপর একটা ভুয়া আক্রমণের ব্যবস্থা করি। প্রায় সাথে সাথেই বি,ডি,আর সৈন্যরা পাকিস্তানীদের বন্দি করে এবং আমাদের সাথে যোগদান করে। এই ঘটনাটি ঘটে ২৮শে মার্চ তারিখে। আমরা সে সময় শুনতে পাই যে মেজর শফিউল্লাহ জয়দেবপুর থেকে বাঙালী সৈন্যদের নিয়ে বের হয়ে গেছেন এবং ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ থেকে উক্ত এলাকার কর্মকর্তা জনাব শামসুদ্দীন আসেন। তিনি জানান যে সাংগঠনিক দিক থেকে তারা অনেক এগিয়েছেন কিন্তু তাদের কোন অস্ত্র নেই। আমরা জানাই যে আমরা ৫০টা রাইফেল তাদের দিতে পারি।

 আমাদের নিজেদের এলাকায় আমরা আমাদের সীমিতসংখ্যক অস্ত্র বিলি করি। যতদূর সম্ভব সেইভাবে আর যেখানে যেখানে ট্রেনিং হচ্ছে সেখানে একটা দুটো করে অস্ত্র দেয়া হয়। এই সময়ে ময়মনসিংহ-এর অবস্থা জানার চেষ্টা করি। আমরা জানতে পারি যে সেখানকার ই,পি,আর বাহিনীও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। শহর প্রায় জনশূন্য। অবশ্য সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের বাসায় পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসান আহমদ এবং সিরাজউল্লাহ ছিলেন এই এলাকার সরকারী কর্মকর্তা। উক্ত সভায় রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া এবং সৈয়দ আব্দুস সুলতান উপস্থিত ছিলেন আমাদের সাথে। আমরা তাদেরকে জানাই টাংগাইলে কি ধরনের কর্মতৎপরতা চালানো হচ্ছে। আলোচনার পর ঠিক হয় যে যদি প্রতিরোধের প্রশ্ন আসে তবে আমরা মধুপুরেই প্রতিরোধ করবো যেহেতু রণকৌশলের দিক থেকে এই জায়গা আমাদের সবচেয়ে সুবিধাজনক মনে হয়। সমস্যা অবশ্য তখনও একটাই ছিল, অস্ত্র কোথায় পাওয়া যাবে।

 টাংগাইল এসে খবর পাই যে পাক-সেনারা টাংগাইল অভিমুখে আসছে। পরে আবার খবর আসে যে মির্জাপুর পর্যন্ত এসে তারা ফিরে চলে গেছে।

 ই,পি,আর-এর কিছু সৈন্য নিয়ে আমি মির্জাপুরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হই। আমরা কালিহাতিতে এসে থামি এবং মির্জাপুর গিয়ে সংসদ সদস্য শওকত আলী খানের সাথে দেখা করি। তিনি আমাদের বক্তব্য শোনেন এবং একমত হন যে প্রতিরোধ করলে মির্জাপুরের আগেই করতে হবে। এরপর মেয়েদেরকে কুমুদিনী কলেজ এবং হোস্টেল থেকে চলে যেতে বলা হয়। কালিয়াকৈর পর্যন্ত গিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। ঠিক হয় পাকসেনাদের গতিবিধির ওপর চোখ রাখা হবে। ওরা এপ্রিল গোলাগুলির আওয়াজ পাই। নাটিয়াপাড়া নামে একটা জায়গায় পাকিস্তানীরা আক্রমণ চালিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ হয় এবং তারপর আমাদের সৈন্যরা পিছু হটে গেলে শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ এবং গ্রাম পোড়ানো। আমি টাংগাইল-এর আগেই ঠিক করে রেখেছিলোম আক্রমণ হলে কোথায় যেতে হবে।

 আমাদের প্রধান কাজ ছিল অস্ত্র হেফাজতে রাখা। কাদের সিদ্দিকী এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন। গিয়ে দেখি তিনি দুটো ট্রাকে অস্ত্র বোঝাই করছেন। নতুন সদর দপ্তরের উদ্দেশে আমরা রওনা হই। আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আমার পরিবারকে গ্রামের বাড়ীতে রেখে আসবো, একসাথে থাকবো না। এখানো বলা যেতে পারে যে, এক এলাকা থেকে আর এক এলাকায় আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। খবর পেলাম টাংগাইল পাকিস্তানীরা দখল করে নিয়েছে। তখন ঠিক করি যে জামালপুর যাবো। সেখানে এম, পি, নিজামউদ্দীনের সাথে দেখা হয়। অস্ত্রের অভাব পুনর্বার প্রকটভাবে জানতে পারি। এরপর আমি নিজ পৈতৃক নিবাসে যাই। গিয়ে দেখি ডাইনামাইট দিয়ে সেটা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং জানতে পারি যে আমাকে ধরিয়ে দেবার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় সিদ্ধান্ত নেই সিরাজগঞ্জ যাওয়াটাই শ্রেয় হবে। সিরাজগঞ্জ আমাদের গ্রামের ঠিক উল্টো দিকেই