কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সম্মিলিত একটি পৃথক গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠেছিল। এই বাহিনী গঠন, ব্যবস্থাপনা, ভারত সরকারের সঙ্গে এ-বিষয়ে যোগাযোগ প্রভৃতির সামগ্রিক দায়িত্বে তখন ছিলেন আমাদের পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ। আমাদের গেরিলা টিম সকল জেলায় পাঠানো হয়েছিল। ঢাকার খোদ রাজধানী, নরসিংদী, রায়পুরা, কুমিল্লায়, নোয়াখালীতে, চট্টগ্রামে, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকস্থানে আমাদের টিমগুলো গেরিলা অ্যাকশন করেছে এবং রণক্ষেত্রে আমাদের কমরেডরা প্রাণ দিয়েছেন। যারা ভারতে যাননি, সেই কমরেডরা দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধের সংগঠন গড়ে তুলছিলেন এবং এঁরাই ভারত থেকে আগত আমাদের গেরিলাদের অ্যাকশনে সাহায্য করেছেন। এখন বয়সের কারণে কোন সময় কোথায় কোথায় আমাদের টিম কিরূপ অ্যাকশন বা লড়াই করেছিল তা স্মৃতি থেকে আমার পক্ষে বিশদ বলা সম্ভব নয়। আমরা নিজেরা এবং বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতায় সাধ্যমতো সারা দেশে যুদ্ধরত ছিলাম। যুদ্ধ ছাড়া সংবাদ বহন, রেকি করা প্রভৃতি যুদ্ধের সহায়ক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আমাদের কমরেডরা করেছেন। কেবল নিচু পর্যায়ে নয়, উঁচু পর্যায়েও যুদ্ধের সংগঠনে আমাদের ভূমিকা ছিল। ছোটোখাটো গেরিলা অ্যাকশন ছাড়া আমাদের গেরিলারা চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানী জাহাজ ডুবিয়েছিল। কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে বেতিয়ারা নামক স্থানে আমাদের কমরেড আজাদ, মুনির প্রমুখ আমাদের গেরিলা বাহিনীর ৯ জন সদস্য পাকবাহিনীর সঙ্গে এক লড়াইয়ে নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে নিহত হন।
মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের পার্টির কেন্দ্রী কমিটির সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সার ঢাকায় আলবদর বাহিনীর হাতে নিহত হন।
মণি সিংহ
(বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি)
মার্চ, ১৯৮৪।