পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৩০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড হাউজে নিয়ে যায় এবং লাঠি ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে বেদম প্রহার করে। বহু নিরীহ বাঙালীকে কার্ফু ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার করে খান সেনারা অমানুষিক নির্যাতন করে। রাতে পাক বাহিনীর অত্যাচারের শিকার বাঙালীদের চিৎকার শুনতে পেয়েছি। সৈন্যরা রাত এগারটায় ব্যোমকেশ বাবু, গিয়াসনগর চা বাগানের ম্যানেজার এবং আমাকে সিলেট সার্কিট হাউজে বন্দী করে রাখে।

 ২৮ শে মার্চ সকালে কর্নেল সরফরাজ আমাকে ইণ্টারগেশন করেন। আওয়ামী লীগের কর্মীদের কে কোথায় আছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমার সমর্থন আছে কিনা এসব প্রশ্ন করে। আমি কর্নেলের কোন প্রশ্নের উত্তর না দেয়ায় আমাকে ভিতরের এক কক্ষে নিয়ে গিয়ে ৩ জন খান সেনা একযোগে ভীষণ প্রহার করেন। তাদের প্রহারে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে আসলে আমাকে পুনরায় কর্নেলের সম্মুখে হাজির করা হয় এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়। আমি তার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় আমাকে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২৯ শে মার্চ বেলা ১টায় আমাকে সিলেট সেণ্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। ৫ই এপ্রিল জেলের ভিতর থেকেই সিলেট শহরের চারদিকে গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং দুপুরের পর কম করে হলেও তিনবার সিলেট শহরের ওপর বিমান হামলাচলে। ব্রাশের শেলের বকেক্টা টুকরা আমাদের কক্ষে এসে পড়ে। ৬ই এপ্রিল জেলের পূর্ব - উত্তর দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে পাক বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলে।ঐদিন প্রায় ৮বার পাক বিমান মুক্তিফোজের ওপর হামলা করে। ঐদিন জেলের সাধারণ কর্মীরা বিমান হামলার ভয়ে বাইরে রাখার দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষের সাথে কথাকাটাকাটি হলে গুলি ছোড়া হয়। আমাদের জেলের দিকে প্রায় ৫০ রাউণ্ড গুলি নিক্ষেপ করা হয়। সারারাত ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। আমরা সৌভাগ্যক্রমে সেদিন রক্ষা পাই।

 ৭ই এপ্রিল সকালে খবর পাই মুক্তিবাহিনী শহরের বেশ কিছু অংশ মুক্ত করে নিয়েছে। ২টার সময় দু’জন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং ৫ টায় সিলেটের সিরাজ সাহেব আমাদের মুক্ত করে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৬টায় মানিক চৌধুরী, এম, এন এ. কর্নেল রেজা ও মেজর দত্তের সংগে চাঁদনিঘাটে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শন করি। ৮ থেকে ১০ই এপ্রিল ডাক্তারের পরামর্শে বিশ্রামে থাকার পর আমি মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক সভায় মিলিত হই। ১২ ই এপ্রিল নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন করা হয়।

 (1) দেওয়ান ফরিদ গাজী, এম,এন,এ জেলা প্রশাসক।

 (2) মোঃ ইলিয়াস এম,এন,এ মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসক।

 (3) মোস্তফা আলী এম,এন,এ হবিগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক।

 (4) মাসুদ চৌধুরী এম,এন,এ সিলেট সদর মহকুমা প্রশাসক।

 (5) জনাব আবদুল হক এম,এন,এ সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক।

 উল্লেখ্য যে, মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সিলেট থেকে কর্নেল রব ও মানিক চৌধুরীকে ভারতে প্রেরণ করা হয়।

 ১২ই এপ্রিল থেকে ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ চলতে থাকে। এইসব যুদ্ধে প্রধান ঘাঁটি স্থাপিত হয়। এই ঘাঁটির দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল রব, কর্নেল রেজা ও মেজর সি আর দত্ত। সিলেট জেলার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে তারা এ ঘাটি থেকে সেনা পরিচালনা করতেন। শেরপুর মুক্তিবাহিনীর ঘাটির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ক্যাপ্টেন আজিজ। ২৫ শে এপ্রিল রাতে ক্যাপ্টেন আজিজ শেরপুর যুদ্ধে আহত হলে তাকে কালীঘাট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ঐদিনই শেরপুর সেক্টরের পতন ঘটে। ২৬ শে এপ্রিল রাতে প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী এবং ইলিয়াস সাহেবের ওপর মৌলভীবাজার