পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৪৩

এসআর মির্জা, ডাইরেক্টর ছিলেন আহামদ রেজা। এর অফিস ছিল ৮নং থিয়েটার রোড, মুজিবনগর কেন্দ্রীয় অফিস ভবনে।

 কামরুজ্জামান সাহেব এবং আমি প্রায় এই ‘যুব অভ্যর্থনা শিবির' এবং ‘যুব শিবিরগুলি’ পরিদর্শন করতাম। আমাদের সার্বক্ষণিকভাবে একটি হেলিকপ্টার নির্দিষ্ট করা ছিল। চব্বিশ পরগণা জেলার হাসনাবাদ টাকী থেকে শুরু করে পূর্বাঞ্চলের আগরতলা সাবরুম পর্যন্ত সীমান্ত বরাবর দীর্ঘ এলাকাব্যাপী এই সমস্ত শিবির স্থাপিত ছিল। সুতরাং এগুলির পরিদর্শন কাজ খুব সহজসাধ্য ছিল না। ‘যুব শিবির’ কিংবা ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হত মুজিবনগর সরকারের বাজেট থেকে। এই হিসাব সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় স্টাফ ছিল, সময় সময় এই হিসাব অডিট করা হত। যুদ্ধ-পরবর্তীকালে এই অডিটের হিসাব বাংলাদেশ সরকারের নিকট দাখিল করা হয় এবং ব্যাংকে রক্ষিত টাকা বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রত্যর্পণ করা হয়।

 ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১। স্মৃতিতে বড় উজ্জ্বল হয়ে আছে দিনটি। ৩রা ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। নয় মাসের স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। প্রিন্সেস স্টীটের অফিসে বসে আছি হঠাৎ খবর এলো ভারত সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। চারিদিকেই আনন্দ-উৎসব শুরু হয়ে গেল। অতি আনন্দে সবারই চোখ অশ্রুসজল। দীর্ঘ নয় মাসের কত মৃত্যু, কত রক্ত, কত বেদনা ও অশ্রুঘন কাহিনীর সকরুণ স্মৃতি। এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য একটা পরিচয়- জাতি হিসেবে গৌরবময় পরিচয় এনে দিয়েছে। একটা নতুন রাষ্ট্র, একটা নতুন জাতির জন্ম পৃথিবীর বুকে স্বীকৃত

 খুব সম্ভব এদিনেই ফোন পেলাম। রিসিভারে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের কণ্ঠস্বর। আমার প্রতি নির্দেশ শরণার্থী প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকারের মধ্যে এক্ষণে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে। আমাকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে বালিগঞ্জ বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে পৌঁছলাম। আমার গাড়ি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফএর এক কর্নেল এসে গাড়ীর দরজা খুলে ধরলে আমি নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেলুট করলো। আশেপাশে দাঁড়ানো আরো কয়েকজন অফিসার একই ভাবে সেলুট দিল। সভাঘরের দরজায় আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং অরোরা এবং কেন্দ্রীয় জয়েণ্ট সেক্রেটারী শ্রী এ কে রায়। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল- এর আগেও অনেকবার এই অফিসে এসেছি, এদের সাথে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আগের তুলনায় আজকের ব্যবহারে বিশেষ পার্থক্য স্পষ্ট চোখে পড়ে। এর কারণ, আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পক্ষে সরকারী এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এই অফিসে আমার আগমন। আলোচনার টেবিলে বসলাম। দু'পার্শ্বের দুই সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ। আমার সামনে বাংলাদেশের পতাকা টেবিলের স্ট্যাণ্ড দাঁড় করানো। বিপরীতে ভারতের পতাকা। আলোচনার বিষয় ভারতে আগত বাংলাদেশের শরণার্থীদের দেশে প্রত্যাবর্তন। প্রথমে আমি ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য এবং এই সভার আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। ভারত পক্ষে আলোচনার সূত্রপাত করেন শ্রী, এ, কে, রায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শরণার্থী কিভাবে ফিরে যাবেন, তার একটা ফর্মুলা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। আলোচনা অগ্রসর হবার পূর্বেই আমি বললাম, এটা তো সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার। কারণ, প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন মর্যাদার সঙ্গেই আমি বাংলাদেশের শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাবো। সুতরাং, ফর্মূলা উদ্ভাবন করে নতুন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই। আমার এই কথায় হঠাৎ ভারত পক্ষ নীরব হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে তাঁর নির্দেশ লাভের জন্য শ্রী রায় কিছুক্ষণের জন্য সভার কাজ বন্ধ রাখলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি সভায় এসে বললেন প্রধানমন্ত্রী শরণার্থী প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর আনুসংগিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা হল। বিভিন্ন স্থান থেকে সুবিধামত শরণার্থীর বাস, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহনে দেশে ফিরবেন। ফেরার সময় হাঁড়ি, পাতিল, চাল