পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৪৬

হাপানিয়া গ্রামে মাইন বিস্ফোরণের দ্বারা একটি সৈন্য বোঝাই ট্রাক বিধ্বস্ত করা হয়। এতে ৮/৯ জন পাক সেনা মারা যায়। হাপানিয়ার দক্ষিণে আরেকটি বিস্ফোরণে দু’জন অফিসারসহ ৫/৬ জন পাক সৈন্য নিহত হয়।

মোহাম্মদ বয়তুল্লাহ
গণপরিষদ সদস্য
(সাবেক এম, এন, এ ) রাজশাহী
২২ অক্টোবর, ১৯৭২।


মোহাম্মদ শামসুল হক চৌধুরী

 ২৩শে মার্চ ভূরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কুড়িগ্রাম মহকুমা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, পুলিশ, আনসার মুজাহিদ, সাবেক ই,পি,আর, আওয়ামী লীগ কর্মী, নেতা এবং সর্বস্তরের জনগণের এক বিরাট সমাবেশে আমি সভাপতিত্ব করি। এই সমাবেশে ইয়াহিয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত নস্যাৎ করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী সৈন্যদের কবল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়। ঐ সমাবেশেই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ভূরুঙ্গামারীর ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।

 ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা শুরু হলে ২৬ শে মার্চ আমরা জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে এক গোপন বৈঠকে থানা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি এবং সমস্ত ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করার জন্য জরুরী নির্দেশ প্রদান করি। বঙ্গবন্ধুর ৮ই মার্চের ভাষণ মোতাবেক সর্বস্তরের জনগণকে সংঘবদ্ধ করার জন্যও আমরা কর্মসূচী গ্রহণ করি।

 ইতিমধ্যে ভূরঙ্গামারী থানার সীমান্তবর্তী ফাঁড়িগুলোর সাবেক অবাঙ্গালী ইপিআর-রা সাবেক বাঙ্গালী ইপিআর-দের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। ইপিআর আনিস মোল্লা এবং রওশনুল বারীর নেতৃত্বে ইপিআরের সদস্যবৃন্দ আমাদের সহযোগিতা কামনা করলে স্থানীয় কর্মী ও নেতৃবৃন্দসহ আমার ভূরঙ্গামারীর বাসস্থানে এক জরুরী বৈঠকে অবাঙ্গালী ইপিআরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাঙ্গালী ইপিআরদের সক্রিয় সাহায্যের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

 ২৮শে মার্চ অবাঙ্গালী ইপিআরদের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরদির ২৯শে মার্চ বাঙ্গালী ইপিআর এবং সম্মিলিত ছাত্র জনতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে জয়মনির হাট ক্যাম্পের একজন অবাঙ্গালী সুবেদার, একজন ড্রাইভার এবং একজন অয়ারলেস অপারেটর নিহত হয়। উক্ত জয়মনিরহাট ক্যাম্পে অবাঙ্গালী ইপিআরদের সঙ্গে সহযোগিতাকারী জয়মনিরহাটের একজন অবাঙ্গালী চক্ষু চিকিৎসক জনগণের হাতে নিহত হয়।

 অত্র থানার অন্যান্য সীমান্ত ফাঁড়ি যেমন- কেদার, সোনাহাট, ধলডাঙ্গা প্রভৃতি স্থানে বাঙ্গালী ইপিআরদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন অবাঙ্গালী নিহত হয়। অবাঙ্গালী ইপিআরদের কবল থেকে জয়মনির হাট ক্যাম্প উদ্ধার করার সঙ্গে সমস্ত অস্ত্রাদি আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে রাখা হয় এবং নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী থানার সমস্ত বাঙ্গালী ইপিআরগণকে তাদের অস্ত্রসমেত উক্ত ক্যাম্পে জরুরী ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ করা হয়।

 অতঃপর সাবেক বাঙ্গালী ইপিআরগণের সঙ্গে আনসার, মুজাহিদ, এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী জয়মমনিরহাটে যোগ দেয়। ছাত্র ও যুবসম্প্রদায়ও এখানে যোগ দেয়। এদের সকলকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়ে আমরা হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের ব্যবস্থা করি।

 জয়মনিরহাটে সংঘবদ্ধ এই দলকে বিভিন্ন ক্যাম্পে এবং পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রাপ্ত সামান্য অস্ত্র দিয়েই রংপুর সামরিক গ্যারিসন থেকে হানাদার বাহিনী যাতে অত্র অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তিস্তাপুল প্রতিরোধ