পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৬০

 স্ক্রীপ্ট সাইক্লোস্টাইল করে ‘জবাসস’ এর External Bureau নাম দিয়ে দিল্লী, বোম্বাই, মাদ্রাজ ও অন্যান্য এলাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের পত্র-পত্রিকার ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠাই। দিল্লীর অনেক প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধু আমাকে হেসে জিজ্ঞেস করতেন, “রহমত, আপনার ‘জবাসস’ -এর External Bureau টা কোথায়?” আমিও হেসে জবাব দিতাম, “আমাদের সব কিছুই এখন চলমান, আজ একানে কাল ওখানে। আমরা হাতের ব্রীফকেসটাই আপাততঃ ‘জবাসস’ -এর চলমান ব্যুরো”।

 দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের একটি মুখপত্র AEON এর সম্পাদক তাদের বাংলাদেশ সংখ্যার জন্য আমরা একটি লেখা নেন। এ সময়েই একদিন দিল্লীতে যাত্রাবিরতিকালে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেষ্ট হাউজে অবস্থানরত ডঃ এ আর মল্লিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি।

 দিল্লী যাবার পূর্বে কোলকাতা থেকে একজন উত্তর কোরীয় সাংবাদিককে সাথে নিয়ে বনগাঁও এলাকার শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে ক্যাম্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। কয়েকটি ছবিও নিয়েছিলাম। এর ওপরে ভিত্তি করে “UN Must rush to the rescue of victims” নামে একটি সচিত্র রিপোর্ট তৈরী করি। বোম্বাই থেকে প্রকাশিত ইংরেজী, উর্দু, হিন্দি, মলয়ালম ইত্যাদি ভাষায় মুদ্রিত BLITZ- এর ১৫ই মে এটি প্রকাশিত হয়।

 জবাসস-এর External Bureau নামে কিছু বাংলা দেশাত্মবোধক কবিতার ইংরেজী অনুবাদ সাইক্লোষ্টাইল করেও প্রচার করা হয়েছিল। এ সম্পর্কিত কিছু রিপোর্ট কোলকাতার অমৃত ও দেশ পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিল। দেশ পাত্রকার নিয়মত ফিচার “ঘরোয়া”র লেখক “শ্রীমতি” (শ্রীমতি সুজয়া সেন)-এর সঙ্গেও আমার দিল্লীতে পরিচয় হয়েছিল। মাতৃসমা এ মহিলার স্নেহ আমার অনেকদিন মনে থাকবে। বাংলাদেশের মুক্তিসগ্রামের প্রতি তার অকৃত্রিম দরদ ছিল। জওয়াহরলাল নেহেরু প্রতিষ্ঠিত দৈনিক National Herald-এর সম্পাদকীয় পাতায় ‘জবাসস’ প্রচারিত “Bengaless are not Cowards" নামক একটি কবিতাও ছাপা হয় ১৩ মে তারিখে।

 এছাড়া বাংগালোর ও হুবলী থেকে একযোগে প্রাকশিত ঐ এলাকার কানাড়া ভাষার Samyukta Karnataka Group of Papers মে'র শেষে আমরা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। দিল্লীর কয়েকজন মুসলমান সাংবাদিক বন্ধু কিছু উর্দু পত্র-পত্রিকাতেও আমার লেখার অনুবাদ পড়েছেন বলে আমাকে জানান। মোট কথা আমার সীমিত প্রচেষ্টায় এই অল্প সময়ের মধ্যেই যতটা সম্ভব প্রচারকার্য চালিয়েছিলাম এবং দিল্লীর সাংবাদিক মহলে সুপরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। এ সময়ে শ্রী ফণী মজুমদারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি সংসদীয় দল দিল্লী সফরে আসেন। বেগম নূরজাহান মুর্শেদও এ দলে ছিলেন। দিল্লী প্রেসক্লাব তাঁদের একটি সম্বর্ধনার আয়োজন করে। শ্রী মজুমদার ও বেগম মুর্শেদ এ সভায় বক্তৃতা দেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

 জয়সিংহ রোডের ট্যুরিস্ট হোষ্টেল থেকে সাংবাদিক বন্ধু শ্রী যতীন্দ্র ভাটনগরের বাসায় কিছুদিন থাকি। এরপরে বাকী সময় দিল্লীস্থ শান্তি পরিষদের আন্তর্জাতিক হোষ্টেলে তাদের মেহমান হিসেবে থাকি। কথিকা ও সাক্ষাৎকারের জন্য আকাশবাণী ও টেলিভিশন থেকে এবং অন্যান্য পত্রিকা থেকে দু'একটি লেখার জন্য প্রাপ্ত সম্মানীর টাকায় আমার খরচ চলে যায়। থাকার জন্য কোন খরচ হয়নি। খাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কিছু খরচ হয়েছে। যাতায়াত, পত্রপত্রিকা কেনা এবং ডাক খরচ সম্মানীর টাকা থেকে চালানো সম্ভব হয়েছিল।

 গান্ধী শান্তি পরিষদের হোষ্টেলে অবস্থানকালে বেনারসের গান্ধীয়ান ইনস্টিটিউট অব ষ্টাডিজ-এর যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক শ্রী সুগত দাশ গুপ্তের সঙ্গে পরিচয় হয়। সর্বোদয় নেতা শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ এ প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক পরিচালক ছিলেন। অধ্যাপক দাশ গুপ্ত আমাকে তাদের ইনষ্টিটিউট-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নেবার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আমি সময়মত যোগাযোগ করবার প্রতিশ্রুতি দেই। এ হোষ্টেলে অবস্থানকালে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকের সংগেও আমার পরিচয় হয়। তাদেরকেও