পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড

উঠল। রাজনৈতিক নেতাদের আলাপে সালাপে মনে হল শুভ দিন সন্নিকটে। চটাকরে মনে পড়ল ক্যাপ্টেন দিদারুল আলমের তাঁবুতে এক ভারতীয় মেজরের কথা। তিনি বলেছিলেন যে আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরতে পারব বলে তিনি আশা করেন।

 তারপরে শুরু হলো চূড়ান্ত যুদ্ধ। ডিসেম্বরের সাত তারিখে আমাদের শিবির বন্ধ বলে ঘোষিত হল। ছেলেরা রওয়ানা হল যার যার দেশে। আমি যাত্রা করলাম নয় তারিখে। সোনামুড়ার চৌকি দিয়ে কুমিল্লা প্রবেশ করলাম।সন্ধ্যায় হাজির হলাম নিজ বাড়িতে। পৌষের প্রসন্ন ভোরবেলায় আবার জমজমাট হয়ে উঠল অগ্নিদগ্ধ বাড়ির ভিটে।

সাঈদ-উর রহমান
(সহকারী অধ্যাপক; বাংলা বিভাগ; ঢাকাবিশ্ববিদ্যায়)
জানুয়ারী; ১৯৮৪।


অধ্যাপক সারওয়ার মুর্শেদ

 প্রথমে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একজন পর্যবেক্ষক এবং পরে এ আন্দোলনে একজন সক্রিয় অংশগ্রহনকারী হিসাবে; সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফাভিত্তিক খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নকারী গ্রুপের একজন সিদস্য হিসাবে ২৫শে মার্চের বেশ আগেই উপলব্ধি করেছিলাম রক্তপাত হবেই, পাকিস্তানের কাঠামোতে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সম্ভব হলেও তা কাগজের নক্সা হয়েই থাকবে। এবং স্বাধীনতাযুদ্ধ অনিবার্য। বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবরে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যখন ঘোষিত হল তখন পাকিস্তানীদের বাংলাদেশে genocide-এর পরিকল্পনাও সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল। জাহাজ বোঝাই সমরসম্ভার এবং সাদা পোশাকে বিমানযোগে পাকিস্তান থেকে অতিরিক্ত সৈন্য আমদানী, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে মেশিগান ও কামানের নগ্ন উপস্থিতি। মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনার সাফল্য সম্পর্কে সন্দেহ বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্মক অভিযান আসন্ন; এ ধারনাকে আমার মনে দৃঢ়মূল করেছিল।

 এ সময়ে একটি চিন্তা আমার মনকে বিশেষ জিজ্ঞাসাসস্কুল করেছিল: বাঙ্গালী জাতি উদ্বেলিত প্রত্যয় ও প্রচণ্ড আবেগে ঐক্যবদ্ধ এবং অগ্নিগর্ভ, কিন্তু একটি সশস্ত্র সংগ্রাম এবং প্রতিরোধের জন্য, সংগঠন এবং আয়োজনের দিক থেকে তৈরি কি? মার্চের মাঝামাঝি সময়ে এ প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব দেয়া সহজ ছিল না। চূড়ান্ত সংগ্রামের প্রস্তুতির জন্য তথা কৌশলগত কারণে সাময়িকভাবে ছ’দফার দাবিকে কিছু নমনীয় করা কি তহলে যুক্তিযুক্ত নয়? কিন্তু একই সঙ্গে এও বুঝেছিলাম যে আন্দোলনের রাশ টেনে ধরার কঠিন ঝুঁকি নেয়া হলেও সেই মুহূর্তে ইতিহাস তার গতি মন্থর করবে। স্বাধীন বাঙালী সত্তার শত্রুরা বাঙ্গালীদের সময় দেবে, এমন চিন্তার নিশ্চিত কোনও ভিত্তি নেই।

 সুতরাং গঠনতান্ত্রিক আলাপ-আলোচনার আড়ালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে যে একটি মৃত্যুযজ্ঞের আয়োজন করছিল এ বিষয়ে বিশ্বজনমতকে অবতিহত করার প্রচেষ্টা আমার কাছে প্রাধান্য পেল। ফরাসী দার্শনিজ জাঁ পল সার্ত্রে, হার্ভার্ড বিশ্ববদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্রুত অর্থনীতিবিদ জন কেথে গলব্রেথ, সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী এবং টাইমস ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকসহ আরও অনেকের কাছে এ বিষয়ে আমি তারবার্তা পাঠাই। এ বিষয়ে আরও উল্লেখ্য যে কিসিঞ্জার-নিক্সনের পাকিস্তান সমর্থনের নীতি এবং বাংলার মাটিতে পরাশক্তিসমূহের অস্ত্রের উপস্থিতি এবং পাকিস্থানী শাসকদের বাংলার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে তা ব্যবহারের ক্রুর সম্ভাবনা কিভাবে বাংলার মানুষকে বিপন্ন জনগণের বিরুদ্ধে তা’ জানাবার জন্য পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে প্রফেসর হেনরী কিসিঞ্জারকে আমি ১৬ই মার্চ একখানা চিঠি লিখি। চিঠিটির অনুলিপি নিচে সন্নিবেশিত হল: