পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড

 মুক্তিযুদ্ধে ও সরকার পরিচালনায় সহায়তা দানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্ল্যানিং সেল মুখ্যতঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবিদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই সেলের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক)। অন্যান্য সদস্যরা হলেনঃ অধ্যাপক খান সারওয়ার মুর্শেদ (ইংরেজী বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,) অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন (অর্থণীতির অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ড. আনিসুজ্জামান (বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ও ড. এস আর বোস। বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আমি সেলের শিক্ষা বিভাগের সথে সংযুক্ত ছিলাম। আমাদের বিভাগের (Education and Social Service Division) অন্তর্ভুক্ত ছিলঃ (1) Formation of Education policy for Secular democratic Socialist Bangladesh (2) Collection of data and views in connection with reform of the examination system (3) Preparation of a report on the problems of Primary and Secondary Education in Bangladesh (4) Preparation of a on the problems of Scientific and Technical Education in Bangladesh (5) Estimating the damage caused to educational institutions in Bangladesh and studying the Socio- Psychological Problems of educational restoration and rehabilitation (6) Studying the problems of demobilized freedom fighters, students, non-students and permanently disabled in the liberation war.

 আগষ্ট মাসে পাকিস্তানের কারাগারে অবরুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই শিক্ষক সমিতি এবং বাংলাদেশ কাউন্সিল অব ইণ্টেলিজেণ্টশিয়া যৌথ উদ্যোগে কোলকাতায় এক জনসমাবেশ ও বিক্ষোভ তিছিলের আয়োজন করে (১৩ই আগস্ট)। সেদিন শহরের বেশ কিছু অংশ প্রদক্ষিন করে আমরা এই বিচার প্রহসন বন্ধকরার দাবীতে কোলকাতার সকল বিদেশী দূতাবাসে আমাদের স্মারকলিপি প্রদান করি। এর পর পরই পৃথিবীর নান স্থানে শেখ মুজিবের বিচারের বিরুদ্ধে বিক্ষাভ প্রদর্শিত হতে থাকে এবং পাকিস্তানী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ হতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে।

 আগষ্ট মাসে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রকৃত অবস্থা জানতে ও উদ্বাস্তুদের অবস্থা পরিদর্শনের এলে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ড.এ আর মলিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে একটি স্বারকলিপি প্রদান করে। এই স্বারকলিপিতে বাংলাদেশের অবস্থা জানিয়ে যুক্তরষ্টের জনগণ ও সরকারের সমর্থন কামনা করা হয়। এই স্মারকলিপির একটি প্রতিলিপি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেসিডেণ্ট নিক্সনের কাছে প্রেরণ করি।

 সেপ্টেম্বর মাসে তদান্তীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দ্রা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরসমুহ পরিদর্শনে এলে আমরা পুনরায় তার সাথে সাক্ষাৎ করি এবং বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের জন্য আহ্বান জানাই। শ্রীমতী গান্ধী আমাদের আশ্বাস দেন যে তা যতাসময়েই করা হবে।

 এছাড়া জুলাই-আগষ্ট মাসের দিকে ড. হেনরী কিসিঞ্জার দিল্লী আগমন করলে আমাদের প্রতিনিধি ড. মযহারুল হক দিল্লি গমন করে তাঁর সাক্ষাৎ কামনা করেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাংলাধেশ নীতি পরিবর্তনের দাবীতে একটি স্মারকলিপি তাঁকে প্রদান করেন।

 এতদসত্ত্বেও আমেরিকান সরকারের বাংরাদেশ বিরোধী নীতি অব্যাহত থাকে এবং পাকিস্তান সরকারকে নানাভাবে সহায়তা দান চলতে থাকে। এই নীতির প্রতিবাদে সমিতির পক্ষ থেকে আমরা পুনরায কোলকাতাস্থ যুক্তরাষ্টীয় কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে নিক্সন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

 নয় মাসব্যাপী যুদ্ধকালে বিভিন্ন শ্রেণীর বহু পরিদর্শক আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং নানাভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেছেন।