পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৩

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড

 ঢাকায় ডঃ আজাদ ও আন্যান্যদের সাথে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। সংবাদ পচ্ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের বেশ ক’জন শিক্ষক প্রতিরোধ আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন। শত বিপদের মধ্যেও তাঁরা একটি কাগজ গোপনে বের করেছেন। নাম ‘প্রতিরোধ’। ঢাকায় আমার আর একটি যোগাযোগ বিন্দু সুলতানা (ছদ্মনাম)। তিনি আমাদের লণ্ডন যোগাযোগ বিন্দুর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর নিয়মিত পাঠাতেন। থাঁর প্রেরিত খবরে ঝানা গিয়েছিল ১ লা জুলাই তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শিক্ষককে যোগদান করতে বলা হলেও বেশকিছু শিক্ষক ঐ আদেশ উপেক্ষা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র উপস্থিতি খুব কম। তাঁর মাধ্যমে ও অন্য সুত্র থেকে তখন যে খবর আমরা পেয়েছিলামঃ অনুপস্থিত শিক্ষকদের একটি তালিকায় শহীদাশক্ষকদেরও অনুপস্থিত হিসেবে দেখান হচ্ছে। ভারতে আশ্রয়প্রার্থী শিক্ষকদের তালিকার সাথে মিলিয়ে দেখা গেল বেশ ক’জন শিক্ষক দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপন করে আছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেনঃ ডঃ আহম্মদ শরীফ, ডঃ মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক আকরাম হোসেন (বাংরা বিভাগ); শহীদুল হক মুন্সি; অধ্যাপক নূরন্নবী ও অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।

 নতুন উপাচার্য হয়েছেন ডঃ সাজ্জাদ হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিন চলছে গেরিলা অপারেশন। সাথে সাথে পাকিস্থানীদের অত্যাচার।

 রশীদুল হাসান ও আহসানুল হক (ইংরেজী বিভাগ), সালাউদ্দিন আহমদ (সমাজবিজ্ঞান), ডঃ আবুল খাযের (ইতিহাস), রফিকুল আসলাম (বাংরা), আ ন ম শহীদুল্লাহ (গনিত)- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ক‘জন শিক্ষক ও বেশ ক‘জন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়েছে। সরকারী পদস্থ অপিসারদের মধ্যে রয়েছেন লোমান হোসেন (টেলিফোন বিভাগ), জনাব ইউসুফ (শিক্ষা বিভাগ)। বহু শিক্ষ ও ডাকার বিশিষ্ট নাগরিককে পাকবাহিনীর অনুচরেরা প্রাণনাসের হুমকি দিয়ে চিঠি প্রদান করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নলিখিত কয়েকজন শিক্ষককে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছেঃ অধ্যাপক এাব এম হাবিবুল্লাহ (ইসলামের ইতিহাস); অধ্যাপক মহম্মদ এনামুর হক (অতিরিক্ত শিক্ষক (বাংলা বিভাগ)। আর নীচের কয়েকজন শিক্ষককে সাবধান করে দেয়া হয়েছেঃ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডঃ নিলীমা ইব্রাহীম (বাংলা) ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (ইংরেজী)। এছাড়া ১ লা জুলাই থেকে অনুপস্থিত সকল শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

 নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে তিনদিন তিনরাত্রি ধরে ঢাকার আশেপাশের গ্রামে বুড়িগঙ্গার ওপারে কামরঙ্গীরচর, নান্দাইল, কামার খাঁ, রুহিলা, বইৎপুর প্রভৃতি এলাকায় অসংখ্য নরনারী, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় পাক সৈন্যরা ও তাদের অনুচর রাজাকার বাহিণী। সাথে সাথে চলে নারী নির্যতন ও ধর্ষণ। সংবাদদাতার মতে প্রায় হাজার খানেক নরনারীকে হত্যা করা হয়েছে।

 খবর পাওয়া গেল ঢাকাবাসীরা বিশেষ করে নিম্ন আয়ের জনগন পশ্চিম পাকিস্তনী দ্যব্য বর্জন করেছে, ঢাকায় জয়বাংরা বাজার বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছ।

 অন্যান্য অঞ্চল থেকে খবরঃ আমার নিয়মিতভাবে খবর পাচ্ছিরাম যে টাংগাইল এলাকায় বিরাট মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলেছে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিবাহিনী। আগষ্টের যে খবর এল যে, এই বাহিনী সিরাজকান্দি ঘাটে একটি অস্ত্র জাহাজ দখল করেছে। আমরা জানতে পেরিছিলাম এই বাহিনীর সাথে অধ্যাপক নূরুন্নবী ছাড়াও আরও কয়েকজন অধ্যাপক সক্ষে রয়েছেন। এরা হলেন কাগমারী কলেজের অধ্যাপক নূরুল আমীনও অধ্যাপক রফিক আজাদ।

 বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা খবর পাচ্ছিলাম ষংখ্যারঘু নাগরিকদের ওপর আবার নতুন করে অত্যাচার শুরু হয়েছে তথাকথিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও। তথাকথিত ক্ষমা ঘোষনায় বিশ্বাস করে যেসব সংখ্যালঘু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।