পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

79 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড লক্ষ মানুষের জীবনহানি ও ব্যাপক ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছে। তিনি বলেন, আজও বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক চক্র বাংলাদেশের তাঁবেদার সরকার খাড়া করেছে এবং জেনারেল ইয়াহিয়া শরণার্থীদের দেশে ফেরার আহবান জানিয়েছে- কিন্তু এসব সত্ত্বেও সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে না, বরং প্রতিদিনই জঙ্গী সরকার যতই গলাবাজী করুক না কেন তারা সেখানে তাদের গণবিরোধী নীতি এখনও সামনে চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট বলেনঃ বাংলাদেশ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক অভিযানের ফলেই এই দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ংলাদেশের অধিকৃত এলাকসমূহের মানুষ আজ দারুণ এক শোচনীয় অবস্থার মুখে পড়েছে। অবিলম্বে ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ গত ২৮শে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদাররা যা করেছে যা করেছে এবং আজও যা করে চলেছে তার এক মর্মান্তিক বিবরণ দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ পাকিস্তানের জঙ্গশাহীর কঠোর সমালোচনা করেন। অধিবেশনের শুরুতে সোভিয়েট উইনিয়ন, সুইডেন ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিগণ কঠোরতম ভাষায় বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে বলেনঃ পাকিস্তানী হানাদাররা বাংলাদেশে যা করছে এবং আজও যা করে চলেছে তা কল্পনাও করা যায় না। তাঁরা দাবী করেন, অবিলম্বে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বরতার অবসান ঘটাতে হবে। তাঁরা বলেছেনঃ বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে পাকিস্তানী সরকারী প্রচারযন্ত্র যতই বিভ্রান্তির জাল বুনুক সেখানকার প্রকৃত ঘটনাবলী আজ আর কারও অজানা নয়। পাকিস্তানী সামরিক সরকার বা সেখানকার জান্তা যা-ই বলুক না কেন সেখানে যা ঘটেছিলো তা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ বা বিশেষ কোনো দাবীভিত্তিক আন্দোলন নয়। তা ছিলো বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবন-মরণের আন্দোলন। আর অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বাংলাদেশের মানুষ তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদী নিও-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনই শুরু করেছিলো। গত ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ যে অভূতপূর্ব বিজয় লাভ করেছিলো পাকিস্তানী হানাদাররা তা মেনে নিতে পারেনি। তাদের কাছে বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র অপরাধ হলো নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদীদের ঔপনিবেশিক স্বার্থে আঘাত লাগার জন্যেই তারা বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সুইডেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েট প্রতিনিধিগণ গভীর আশংকা প্রকাশ করে বলেন যে, অবিলম্বে বাংলাদেশ সংকটের সমাধান না করা হলে তা এক মহাপ্লাবী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে এবং তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ ক্রিসটার ভিকম্যান বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী যা চালাচ্ছে তা কোনোমতেই সমর্থন করা যায় না। দেশমাতৃকার বুক থেকে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে দেবার জন্যে বাংলাদেশের মানুষ আজ পাল্টা আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশের পাক অধিকৃত এলাকার সর্বত্রই দুর্বার লড়াই চলছে এবং এ লড়াইয়ের পরিণতি বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে দারুণ বিপজ্জনক। মিঃ ক্রিসটার ভিকম্যান এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশে মান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এবং বাংলাদশের মানুষের পূর্ব নিরাপত্তার ব্যাপারে অবিলম্বে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সচেষ্ট না হলে এ সংকট বহু দূর গড়াবে।