পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড যেমন করে সমুদ্রের অগাধ জলের মধ্যে অত্যন্ত স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে, মুক্তিসেনাকেও সেভাবে জনসমুদ্রে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে হবে। Mr. Malcom Browne তাঁর এই রিপোটে বলেনঃ বাংলাদেশের বীর মুক্তিসেনারাও আজ বাংলাদেশের বিশাল জনসমুদ্রে মাছের মতোই সাঁতার দিয়ে বেড়াচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস সংবাদদাতা বলেনঃ গত সপ্তাহে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করে আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অধিকৃত বিভিন্ন এলাকা এবং মুক্তিবাহিনী নিয়ন্ত্রিত বিশাল এলাকা সফল করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমি কোনদিন তা কল্পনাও করিনি। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে একটা দেশের সমগ্র জনগণ মুক্তিসেনানী হয়ে উঠবে একথা ভাবাও যায় না। কিন্তু ভাবনা-চিন্তা নয় বাংলাদেশে গিয়ে আমাকে তো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। আজ বাংলাদেশের যে কোন পর্যটক যেকোন সাংবাদিক যান না কেন তিনিও আমার মতোই বিস্ময়ে মুগ্ধ হবেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বাংলাদেশের সর্বত্র শোচনীয়ভাবে পর্যুদস্ত হতে দেখে আমার শুধু বার বার একটা কথাই মনে হয়েছে যে ভিয়েৎনাম যুদ্ধ থেকে এইসব হতভাগ্য পাকিস্তানী সৈন্য ও সমর নায়করা কিছুই শেখেনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকৃত এলাকায় আমি যেসব পাকিস্তানী সামরিক অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি, জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তাদের সবাইকেও মনে হয়েছে এক একটি আস্তো উজবুক। পাকিস্তানের মাথামোটা সমরনায়করা বাংলাদেশে বড়ো বড়ো রেজিমেন্ট ও ব্যাটেলিয়ন নিযুক্ত করেছে Asgåro fê Hoà of so at-Tă şi fog God is not with the big battalions -offs আল্লাহ তাদের সহায় নন। বাংলাদেশের গণগেরিলাদের হাতে তারা চূড়ান্তভাবে মার খাচ্ছে। পাকিস্তানের ব্যাটেলিয়নগুলো এখন কেবল প্রাণরক্ষার জন্যেই লড়াই করছে। বাংলাদেশের নদী-মাঠ-প্রান্তরে আর জলাভূমিগুলোয় পাকিস্তানী যুদ্ধজয়ের স্বপ্নের কবর দিয়েছে বাঙালী গেরিলারা। যে কোন বিদেশীর পক্ষে বাংলাদেশের এই বাস্তব পরিস্থিতিটুকু উপলব্ধি করা আদৌ কঠিন ব্যাপার নয়। কারণ শুধু গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে নয়- বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকাসমূহের প্রতিটি শহর-বন্দরের সর্বত্রই মুক্তিবাহিনীর দেখা পাওয়া আদৌ কষ্টসাধ্য নয়। হোটেল, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক, দোকান, বিদেশী ফার্ম, কনসুলেট অফিস থেকে শুরু করে সরকারী অফিস আদালতের প্রত্যেকটি দফতরে তারা সক্রিয়। বাংলাদেশের আমি যেখানে গেছি, যার সঙ্গে কথা বলেছি সবখানে সবার মুখে একই কথা শুনেছি পাকিস্তানী হানাদারগুলোকে আমরা নিশ্চিহ্ন করবোই। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চলবেই। পাকিস্তানী বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা এখন এমন অবিশ্বাস্যরূপে কমতে শুরু করেছে যা বিশ্বাস করাও কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে আজ এটাই কঠোর বাস্তব। দৃষ্টিপাত ১৪ জুন, ১৯৭১ আমাদের চোখের সামনেই যেন একটি মর্মান্তিক ইতিহাস তার পৃষ্ঠাগুলো দিনের পর দিন উন্মোচন করে দিল। আর আমরা সবাই হয়ে থাকলাম ইতিহাসের এক-একজন উজ্জ্বল সাক্ষী। সর্বযুগের, সর্বকালের এবং সর্বদেশের একটি নিষ্ঠুরতম ঘটনা, একটি অমানুষিক পৈশাচিকতা, একটি হৃদয়বিদারক, বিশ্বাসঘাতকতা