পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| || বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড গণপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের এমন দুর্বার আগ্রহ ছিল বলেই নির্বাচনী-বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আহবার জানিয়েছেন। এজন্য তিনি ১৫ই ফেব্রুয়ারী তারিখটিও নিদিষ্ট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইয়াহিয়াই তারিখ। কিন্তু সেদিনও পরিষদের অধিবেশন বসতে দেয়নি ইয়াহিয়া খানই-গণপ্রতিনিধিরা নয়। আর এভাবেই শাসনতন্ত্র রচনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনের পথ গণপ্রতিনিধিদের সামনে বন্ধ করে দেয়া হয়েছেঅথচ আজ হঠাৎ করে সেই জঙ্গীশাহীর মুখেই শোনা যাচ্ছে গণপ্রতিনিধিদের প্রতি দায়িত্ব পালনের আবেদন। শুনে চমকে উঠতে হয় ভূতের মুখে রাম নাম শোনার মত। কিন্তু আর যাই হোক হঠাৎ করে জঙ্গীশাহীর এই সুমতির পেছনে যে কোন সাধু উদ্দেশ্য নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেদিন ও আজকের অবস্থাটার দিকে তাকালেই জল্লাদী আবেদনের গোমরাটা ফাঁস হয়ে যাবে। ৩১০ সদস্যের জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের সদস্যসংখ্যা ১৬৭। ৩০০ সদস্যের বাংলাদেশ পরিষদেও আওয়ামী লীগারের সংখ্যা ২৮৮। যদি মার্চের এক তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতো, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আওয়ামী লীগ জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী একটি শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারতো, ক্ষমতাসীন হতে পারতো। ফলে সমাধি রচিত হতো জঙ্গীশাহীর। কিন্তু তা হতে দিতে চায়নি জল্লাদ ইয়াহিয়া। আর চায়নি বলেই ষড়যন্ত্র আর শঠতার আশ্রয় নিয়ে সে বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে বাংলার মানুষের ওপর। লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে, অসংখ্য ঘর-বড়ি জুলিয়ে দিয়ে, প্রায় এক কোটি মানুষকে দেশান্তরী করেও ইয়াহিয়া বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের বিবেককে কিনে নিতে পারেনি। তাই সেই বিবেকহীন জল্লাদ কলমের এক খোঁচায় জবাই করেছে আওয়ামী লীগের ৭৯ জন জাতীয় পরিষদ এবং ১৯০ জন প্রাদেশীক পরিষদ সদস্যকে। ইয়াহিয়ার দৃষ্টিতে তার পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ পরিষদে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা এখন সংখ্যলঘু। শেখ মুজিব কারাগারে। পাকিস্তানের সাবেক জঙ্গীশাসক আইয়ুবের জারজ সন্তান এবং বর্তমান শাসক ইয়াহিয়া লেজুড় ভূট্টোর দল জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগুরু। সুতরাং আর ভয় নেই। তাইতো আজ জল্লাদ ইয়াহিয়া মেহেরবানি করে পরিষদ সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনের আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু বড় দেরী হয়ে গেছে। এ আবেদনের আজ শুধু মানুষের মনে বিদ্রুপ, ঘৃণা আর ধিক্কার সৃষ্টি করবে।. ২৭ শে আগষ্ট, ১৯৭১ বিদেশী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানী জঙ্গশাহী বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার তথাকথিত দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত গণপ্রতিনিধিদের শূন্য আসনগুলির উপনির্বাচন অনুষ্ঠান স্থগিত রাখতে চায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের যে ৭৯ জন অনুসারীকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাদের সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে, তাদের জায়গায় আগামী নভেম্বর মাসে উপনির্বাচন হবে বলে ইয়াহিয়া খানই ঘোষণা প্রচার করেছিল। লণ্ডনের ডেলী টেলিগ্রাফ পত্রিকা জানিয়েছে যে, নির্বাচনে দাঁড়াবার মত দালাল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই ইয়াহিয়া খান উপনির্বাচন স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এর আরেকটা কারণ হচ্ছে গেরিলাদের অপ্রহিত তৎপরতা। তারা যে কোনভাবে হোক উপনির্বাচনের প্রহসন ঠেকিয়ে রাখবে। ডেলী টেলিগ্রাফ বলেছে, ইয়াহিয়া খান খুব শিগগিরই উপনির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। বলা নিম্প্রয়োজন, যা ঘটতে যাচ্ছে তা অপ্রত্যাশিত বা আকস্মিক কিছু নয়। গত ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরবর্তী তেইশ বছরের প্রথম নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়েছে শোষক-ষড়যন্ত্রী শাসকের কজা থেকে নিজেদের ভাগ্য ছিনিয়ে আনার দূর্বার আকাঙ্ক্ষায়। বিজয়ী করেছে তাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিব এবং তার দল আওয়ামী লীগকে। দেশ ও