পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|12 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দেশবাসীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ভালোবাসা এবং তার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ বিশ্বাস ও আস্থাই নেতা ও জনতাকে পরস্পরের কাছাকাছি টেনে এনেছে। এই নৈকট্যবোধ এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেই প্রতিফলিত হয়েছে নির্বাচনী রায়ে। এই নির্বাচনের লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। কিন্তু এই নির্বাচনের রায় যখন শেখ মুজিবের পক্ষে গেল, যখন শোষক-ষড়যন্ত্রকারী গণদুশমন শাসকরা বুঝতে পারলো যে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার মানে হলো নিজেদের কবরের উপর জনতার বিজয়-কেতন উডভীন করা, ওরা প্রমাদ গণলো লিপ্ত হলো নির্বাচনী রায় বানচালের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। ন্যায়নীতিবিবেকের মাথা খেয়ে জঙ্গীশাহী জনতা, গণ-প্রতিনিধিবর্গ আর তাদের নেতা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে শুরু করলো নতুন চক্রান্ত। উদ্দেশ্য-যে কোনভাবে হউক পরিষদের অধিবেশন বাতিল এবং শেখ মুজিবকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ লাভ থেকে বঞ্চিত রাখতেই হবে। আর এই দুরভিসন্ধি হাসিলের জন্য কি না করেছে জঙ্গীশাহী। রক্তগঙ্গা সৃষ্টি করেছে ওরা বাংলাদেশে-খুন, জখম, লুট, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এমন কোনও খারাপ কাজ নেই যা ওরা করেনি। এমনকি শেখ মুজিবকে বন্দী করে, বিচারের প্রহসন মঞ্চ সাজিয়ে তাকে হত্যা করার চক্রান্ত করতেও ওরা পিছপা হয়নি। তাতেও যখন কাজ হয়নি-মাথা নত করেনি বাংলার নেতা ও জনতা-জল্লাদ ইয়াহিয়া কলমের এক খোঁচায় খারিজ করেছে পৌনে তিনশত গণপ্রতিনিধির সদস্যপদ। কারণ, ইয়াহিয়া ভেবেছিল আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের এসব শূন্যপদে উপনির্বাচন করে দালালদের পার করিয়ে নেওয়া যাবে, গঠন করা যাবে একটি পুতুল সরকার-যে সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হবে জল্লাদের পা চাটা। কিন্তু বিধি বাম, বাংলার মাইর দুনিয়ার বাইর। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা আর বীর জনতার মিলিত প্রতিরোধের সামনে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে ইয়াহিয়ার তোগলকি খোয়াব।... ...সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ রয়টার পরিবেশিত এক খবরে জানা যায়, পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর নায়ক ইয়াহিয়া খান গত মঙ্গলবার ইরানের রাজধানী তেহরান গিয়ে পৌঁছেছে। ওয়াকেবহাল মহল জানিয়েছেন, ইয়াহিয়া খান ইরানের শাহের সঙ্গে পাক-ভারত সম্পকে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পকে আলাপ-আলোচনা করবে। তেহরানের ইংরেজী দৈনিক তেহরান জার্নাল-এর উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার আরও জানিয়েছে, পাকিস্তান ও ভারতের বর্তমান সংঘাত ইরানের মধ্যস্থতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। পত্রিকায় আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশের সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পক বিরাজমান থাকায় ইরান দুই দেশের সম্পকোন্নয়নের ব্যাপারে তৃতীয় যে কোন দেশের চাইতে অধিকতর ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে পারবে। পত্রিকাটিতে এমনও নেতাদের বৈঠকের একটা চমৎকার সুযোগ করে দেয়। ঠিকই দিল ঢাকা থেকে এক বেতার ভাষণে বাংলদেশের অধিকৃত এলাকার লাটবাহাদুর গাদায় মালিক বলেছে যে, সে ভারতীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে দুটি খবরের উৎসস্থল তেহরান ও ঢাকার মধ্যে দূরত্ব অনেক-হাজার হাজার মাইল। কিন্তু আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে খবর দুইটির সারসংক্ষেপে। ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকছে অনেকের কাছেই। তবু একথা সত্য যে, সমস্যার কেন্দ্রভূমি বাংলাদেশ হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহিয়া ধর্না দিয়েছে ইরানের দরবারে, উদ্যোগ-আয়োজন বাস্তচু্যত বাঙ্গালী শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনবার জন্য আলোচনা করতে চাইছে ভারতীয় মন্ত্রীবর্গের সঙ্গে।