পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|19 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড একই দিনের আরেকটি খবরে জানা যায়, যে সমস্ত বৃটিশ, মার্কিন ও জার্মান নাগরিক বাংলাদেশে আছেন অবিলম্বে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা এই মুহুর্তেই স্বদেশে ফিরতে পারছেন না তাদেরকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। একটি নতুন ফ্রন্ট খুলেছে। সাতক্ষীরা মহকুমাও গতকাল শত্রমুক্ত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর একটি দল খুলনা শহর অভিমুখে এগিয়ে চলেছে। আর যশোর ক্যান্টনমেন্টের চারপাশে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণাত্মক তৎপরতা প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে আকাশবাণীর খবরে জানা যায়, পকিস্তানী সৈন্যরা বুধবার মধ্যরাত্রি থেকে পশ্চিম দিনাজপুরের জেলা সদর বালুরঘাটের ওপর একটানা ১২ ঘণ্টা ধরে গোলাবর্ষণ করায় ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আগরতলা সীমান্তেও পাকিস্তানী বাহিনীর অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সমগ্র পাকিস্তানে ইতিপূর্বেই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আশংকা করবার সঙ্গত কারণ রয়েছে যে, পাকিস্তানী কাণ্ডজ্ঞানহীন জঙ্গীচক্রের ভারত আক্রমণের সম্ভবত বেশী দেরী নেই। ভারতও প্রস্তুত হয়ে আছে হামলার পাল্টা জবাব দেবার জন্য। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ভারতীয় বাহিনীকে সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফলে একথা নিশ্চিত যে, পাকিস্তান যদি আক্রমণ চালায় ভারত তার দাঁতভাঙ্গা জবাবই দেবে। আর সে জবাব যে পাকিস্তানী জঙ্গীচক্রের জন্য কত ভয়াবহ হবে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে সম্প্রতি ভারতের আকাশসীমা লংঘনকারী ৪টি পাকিস্তানী বিমানের তিনখানির ভূ-পতন। কিন্তু, কেন এই রণপীয়তারা? কেন এই যুদ্ধের আগুন? ভারত যুদ্ধ চায় নাই। ভারত চেয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন জাতি হিসাবে বাঁচুক, সেখান থেকে জঙ্গী বর্বরতার অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণভয়ে যারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, তারা সসম্মানে দেশে ফিরে যাক। তবু, শুধুমাত্র এই মৌলিক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির দায়েই পাকিস্তান ভারতের ওপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিতে চাইছে। আগাগোড়াই ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে ভারতের কারসাজি বলে চালিয়ে দিয়ে বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করতে। আজ যখন ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেয়া ভাড়াটিয়া বাহিনী শেখ মুজিবের বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চারদিকে থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তখনও ইয়াহিয়া খান সেই পুরাতন সুরেই কথা বলছে। মুক্তিবাহিনীর হাতে নিজের ভাড়াটিয়া সৈন্যদের পরাজয়ের কথা স্বীকার করতে লজ্জাবোধ হওয়াতেই হয়তো সে বলে চলছে ভারতীয় সৈন্যরা পূর্ববঙ্গ আক্রমণ করেছে। আর এই কল্পিত অভিযোগে তুলেই জল্লাদ ইয়াহিয়া ভারত আক্রমণের পাঁয়তারা করছে।.. ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিারা গান্ধী অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদান এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌছার জন্য পাকিস্তানী জঙ্গীশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ইয়াহিয়া খানের শুভেচ্ছা বাণীর জবাবে শ্রীমতী গান্ধী পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে তার এই আহবান জানিয়ে দেন। ভারত সরকারের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেন যে, ইয়াহিয়া খান শ্রীমতী গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে মুখপাত্রটি বলেন, শ্রীমতী গান্ধী বলেছেন, ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশ কোন আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারবে না। শ্রীমতী গান্ধীর মতে, তিনি বাংলাদেশের জনগণকে কোন সমাধান মেনে নিতে বলতে পারেন না। কারণ সে অধিকার তার নেই।