পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

17| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোনরকম বাধনিষেধ বা ঘৃণার জন্ম দিতে কখনও রাজি হয়নি। আমরা জানিয়ে দিয়েছি কোন কিছু জোর করে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিলে আমরা মেনে নেবো না- যেমন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা আমরা ব্যর্থ করে দিয়েছি; কিন্তু তখন একথা আমরা বলিনি, উর্দু ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আমরা বিদ্বেষভাবাপন্ন। এমনকি বাংলাদেশে যে সমস্ত উর্দুভাষী বাস করছেন তাদেরকে উর্দু বাদ দিয়ে কেবল বাংলাই শিখতে হবে এমন কথাও আমরা বলিনি। আমরা সব সময়ই উদার নীতি গ্রহণ করেছি। আমরা স্মরণ করেছি যে, হিটলারের সঙ্গে যখন যুদ্ধ চলছে, তখনও জার্মান সাহিত্য গ্রন্থ বা সংগীত বন্ধ করে দেয়নি বৃটেন। এই দৃষ্টান্ত আমাদের লেখকরা বারবার কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থিত করেছিলেন; বিশেষ করে ভারত থেকে বাংলা গ্রন্থাদি আমদানী করার সয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আমরা বলেছিলাম যে, যে জাতি জ্ঞানের দরজা বন্ধ করতে উদ্যত হয় সে জাতির মৃত্যু অনিবার্য। কেবল গায়ের জোরে একটি জাতি টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস তার সাক্ষী.... ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ... আমরা, বাংলাদেশের মানুষেরা, সবসময় পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাস করতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম বলেই দীর্ঘকাল ধরে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য প্রচণ্ড স্বার্থ ত্যাগ করেছিলাম। বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে, আর বাংলাদেশে সামান্য কয়েক শ কোটি টাকার অভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি, সম্ভব হয়নি ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ। লক্ষ লক্ষ বাঙালী প্রাণ দিয়েছে। তবু পশ্চিমী কুচক্রীদের চৈতন্যেদয় হয়নি। শেষ পর্যন্ত বীর বাঙালী হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে, যুদ্ধ করেছে ও করছে শত্রর সঙ্গে। এখন চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণার সময়, এখন শত্রর পরাভব শিকারের সময়, এখন শত্রর অস্ত্র ত্যাগ করে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সময়। এখন সত্যের জয়, আলোকের জয়, ন্যায়ের জয় ঘোষণার সময়। এখন নতুন সূর্য ওঠার সময়।... বাংলাদেশ, বাঙালী জাতি আজ সেই গৌরবের অধিকারী হতে চলেছে। তারা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। প্রাণ দেয়ার মহান কর্তব্যে বাংলাদেশের লক্ষ তরুণ আত্মনিয়োগ করেছে। তাদেরই একজন আমিন। সেই আমিনের আত্মত্যাগের কথা লিখেছেন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’। পত্রিকাটি লিখছেনঃ “তেতুলিয়া নদীর পাড়ে ছোট একটি গ্রাম, নাম তার সোনাহাটি। কবে অনাদি কালে কে এই মিষ্টিমধুর নামটি রেখেছিল জানি না, তবে সোনারহাট না হলেও ঘর আলো করা অফুরন্ত সুখ-সৌন্দর্য এই গ্রামটিকে ঘিরে ছিল-আজও কালের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তার সবটুকু হরণ করে নিতে পারেনি। সোনাহাটির প্রতিটি গাছ, পাতা, লতা আর ধূলোমাটির সাথে তার অন্তরের একান্ত আত্মিক সম্পর্ক। সে বন্ধন কেউ কোনদিন ছিন্ন করতে পারে না- পাক হানাদার বাহিনী তো দূরের কথা মহাকালও সেখানে এসে থমকে দাঁড়ায়। এরপর হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তেতুলিয়াতে যে যুদ্ধ হয় তার প্রসঙ্গে পত্রিকাটি লিখছেনঃ “তেতুলিয়ার বুকে আজ দসু্যদের গানবোট। গোলাগুলির বজ্ৰগম্ভীর শব্দের অকস্মাৎ সোনাহাটির আকাশবাতাস কেঁপে উঠছে। চোখের পলকে ছোট ছোট কুটিরগুলো দাউ দাউ করে জুলে উঠল। বিশ্বাঘাতক বেঈমানেরা হানাদারদের খবর দিয়েছে- খবর দিয়েছে আমিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা সুসংঘটিত হয়ে আক্রমণ পরিচালনা করছে। আর যোগ্য সেনানীর ন্যায় পরিচালনা করছে ওর সহযোদ্ধাদের। এ যুদ্ধ হলো বিপ্লবী বাংলাদেশের বীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধ, যে মুক্তিযুদ্ধ কোনদিন ব্যর্থ হয়নি, হতে পারে না। চারদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে রাইফেল আর হাল্কা মেশিনগানের গুলি হানাদারদের আক্রমণের জবাব দিতে আরম্ভ করল। পাক পশুরা এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সারাদিন ধরে এইভাবে চললো গুলিবিনিময়। একশো’র উপর খান