পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

200 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ওয়াদেদার আর লায়লা খালেদের পাশে বাংলার বীরঙ্গনা রওশনারা নিজের নাম যোজনা করে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এ প্রসঙ্গে কবির সেই বৈপ্লবিক চেতনার কথা স্মরণ করতে হয়। কবির ভাষায় এ বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। কিংবা জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান। আজকের আমাদের এ সংগ্রামও বাংলার মাতা, ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে মহীয়ান হয়ে উঠেছে। আজকে দেখি বঙ্গমাতার হীরের টুকরো ছেলে যখন অশ্বধামের বলির মত বর্বর পশুর হাতে স্বাধীনতা শিকারে পরিণত হয়েছে তখনও শোকাকিনী মাতা সগর্বে আর এক সন্তানকে তার প্রতিশোধ নিতে মুক্তিসংগ্রামে পাঠাচ্ছে। আজকে বাংলার ভগ্নীকুল তার নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়েও ভাইকে দেশের স্বাধীনতা মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে। আজকে বাংলার কুলবধূ স্বামী হারিয়েও রণাঙ্গনের পাশে পাশে বীর সৈন্যদের সেবশুশ্রা করছে। করে-কামান, মেশিনগান, ট্যাঙ্ক চালিয়ে, নাপাম বোমা ব্যবহার করেও আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে নস্যাৎ করতে পারে নাই। কেননা আমাদের ভাইরা যখন রণাঙ্গনে থেকে শক্ৰ খতম করছে, বিভিন্ন জায়গায় রাস্ত, সড়ক, সেতু উড়িয়ে দিচ্ছে তখন বাংলার মহিলারা তাদের অনুপ্রেরণায় শরীরে ডিনামাইট বেঁধে ট্যাঙ্ক ধ্বংস করছে। বিভিন্ন ট্রেনিং গ্রহণ করছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে মহিল সমাবেশ সৈন্যদের খাবার ও পোশাক তৈয়ার করা হচ্ছে। চিকিৎসালয়ে মায়েরা বোনেরা নার্স হিসাবে তৎপর রয়েছে। ‘কোনকালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারি প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।” তাই বাংলার বিজয়লক্ষ্মী নারীরও আজ বঙ্গবন্ধুর ‘রক্ত যখন দিয়েছি আরও রক্ত দেব মন্ত্রে আজ দীক্ষা নিয়েছে। জয় বাংলা। (মেহের খন্দকার রচিত) দেশবাসী সমীপে নিবেদন ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ দুৰ্বত্তেরা না জানলেও, পৃথিবীর মানুষ জানে। অনেকেই আজ একে অপরের কাছ থেকে ছিটকে পড়েছে। লক্ষ মানুষ ছিটকে পড়েছে দিগ্বিদিক-স্বদেশহারা, গৃহহীন, আত্মীয়স্বজনহারা। একদিন যার কাছে ছিল, আজ নেই।