পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

206 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড চেয়েও কি মানসিক দুরবস্থায় আছেন। হার না মানা সেসব বিবেকসম্পন্ন সাংবাদিকরা তো মরে যান নি! মুক্তিপ্রত্যাশী সেসব সাংবাদিকরা দুর্বার আকাংক্ষা নিয়ে এখনো জনগণের সংগ্রামী চেতনা ও মনোবল যোগানোর জন্য লেখনীতে অগ্নি ঝরিয়ে যাচ্ছেন। বাঙালী জাতি তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা কোন দিনই ভুলে যাবে না। মুক্তিসংগ্রামে তাদের অমূল্য অবদান অমর ও অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাঙালী জাতির সংগ্রামী চেতনার এবং ইতিহাসে । পশ্চিমা হানাদার বাহিনী- যারা পৃথিবীর বুক থেকে বাঙালী জাতিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলেন- যাদের আক্রমণে ১৪ লক্ষ নিরস্ত্র লোক নিহত- যাদের অত্যাচকারে ৯০ লক্ষ নিরপরাধ, নিঃসহায় মানুষ নিজেদের আবাসভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে- তাদের ক্ষমা নেই। বাঙালী জাতি তার সমুচিত প্রতিশোধ নিতে আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শুধু তাই নয়- বাংলাদেশের যেসব পত্রিকা মালিকপক্ষ ও সাংবাদিক গোষ্ঠী আজো সেই নরঘাতক ঔপনিবেশিক সরকারের নারকীয় কার্যক্রমকে সহায়তা করছেন এবং মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন তাদেরও ক্ষমা নেই। সেদিন খুব বেশী দূরে নয়। এর যথাযোগ্য প্রতিদান তারা পাবেনই। পশ্চিম পাকিস্তানে কোনদিনই তাদের ঠাই হবে না। আত্মশুদ্ধি এবং দোষ স্থলনের পথ এখনো খোলা আছে। আমরা তাদের সংগ্রামী আহবান জানাই তারা যেন হানাদার এহিয়া সরকারের তাঁবেদারী ও দালালী ত্যাগ করে, এখনো জনগণের মুক্তিসংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করতে এগিয়ে আসেন। বাঙালী জাতি হানাদার জঙ্গীশাহীর কোন প্রকার চাতুরিতেই আর বিভ্রান্ত হবে না। তারা জানে বাংলাদেশে অসামরিক পুতুল সরকার নিয়োগ, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও আলোচনার জন্য ভারত সবকারকে আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে তাদের আন্তরিকতা ও সততা কতটুকু আছে। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করাই হচ্ছে বাঙালী জাতির শেষ কথা! বাঙালী জাতি তাদের জীবনে আর কখনো ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না, বরং পশুশক্তির সমূলে উচ্ছেদ করাই হচ্ছে তাদের বজ্ৰকঠোর শপথ। সে সংগ্রামে বাংলাদেশের বুদ্ধিদীপ্ত বিবেকসম্পন্ন সাংবাদিক শ্রেণীই বা কেন পিছিয়ে থাকবেন। বাঙালী জাতির দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসে তাদেরও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। আজ যখন সে দিন অত্যাসন্ন তখন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য বিনা দ্বিধায় তাদের এগিয়ে আসা উচিত। পূর্ব দিগন্তে উদীয়মান মুক্তিসূর্যের দীপ্ত আভাস ফুঠে উঠেছে। তাকে জীবন্তভাবে প্রকাশের মাধ্যমে জনগণ ও বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরার অনেকটা দায়িত্বই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উপর ন্যস্ত। (গাজীউল হাসান রচিত) আমরা তাদের ভাতে মরবো ১অক্টোবর, ১৯৭১ রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে দিয়ে জিন্না এভিনু হয়ে ফকিরাপুল আমার গন্তব্যস্থল। রেলওয়ে হাসপাতাল পেরিয়ে শ'দুয়েক ফুট যাওয়ার পরই রাস্তার ডান দিকের টেলিফোন ভবনের স্থানে মেশিনগানের ট্রিগারে হাত দিয়ে শুয়ে থাকা কয়েকজন সৈনিক দৃষ্টিগোচর হবে। জানোয়ারের রুক্ষ হিংস্রতা নিয়ে তারা অদৃশ্য শত্রর দিকে নিশানা করে রয়েছে। এ ছাড়াও টেলিফোন ভবনের চারদিকে প্রকাশ্য ও গোপন জায়গা থেকে প্রহরারত রয়েছে আরও শ’খানেক সৈনিক। দেহের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তারা সশস্ত্র। কিন্তু টেলিফোন ভবনের মূল ফটকে অস্ত্রের সমাবেশ বেশী চোখে পড়বে না। সেখানে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল হাতে কয়েকজন অবাঙালী মোহাজের