পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

223 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড থেকে মুক্ত করল, তাদের দেশপ্রেম ও কর্মশক্তিকে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজে লাগাতে হবে। এদের সাহায্যে গ্রামবাংলার কৃষি অর্থনীতিতে দ্রুত বিরাট পরিবর্তন আনা সম্ভব। (ডা, এবনে গোলাম সামাদ রচিত) অগ্রগামী মুক্তিবাহিনী ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তানী বর্বর সেনারা মুখের উপর এক বিরাশী-সিক্কার চড় খেয়ে মাথা ঘুরে পড়ার উপক্রম। গত মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত সমানে জ্বালাতন করে, বাংলার বুকে আগুনের লেলিহান শিখা জুলিয়ে, সমৃদ্ধ জনপদ শশানে পরিণত করে, বাংলার শক্তিকে নিঃশেষ করেছে ভেবে, বাংলার পথে পথে শকুনী-গৃধিনী এবং শিবাদলের অট্টহাসিতে ভরে তুলেছিল বাংলার আকাশ। কিন্তু ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি তাদের বোধের অন্তরালে কখন যে জেগে উঠেছে, অনুধাবন করতে পারেনি অদূরদশী বর্বর হয়েনার দল। আচমকা কোন দিক থেকে গালের উপর পড়ল বিরাশী সিক্কার চড়। আর অমনি বন্ধুর দল হায় হায় করে উঠলো। নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বিতাড়িত হয়ে সাধারণ পরিষদে হাজির গণতন্ত্রের জিগির তুলে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন তুলে, পাকিস্তানের নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পাকিস্তানী বন্ধুরা আরামকে হারাম করে বিশ্বের দরবারে হাজির হলো। বন্ধ কর, যুদ্ধ বন্ধ কর। কারণ কী? কারণ আছে তো বটেই। মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে পরিণতির দিকে। একের পর এক পতন হচ্ছে নিরাপদ দুর্গগুলোর সাহায্যদ্রব্য আনয়নের এবং পাঠানোর পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। দুটি প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম এবং চালনা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। বিমান বাহিনী যে সাহায্য করবে সে উপায়ও নেই। কুল্লে দু’খানা বিমান এখন পাকিস্তানের বেঁচেবর্তে আছে, তাও আবার লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। কেননা সারা বাংলাদেশে জানোয়ারগুলোর আর লুকানোর কোন ঠাই নেই। মুক্তিবাহিনী খুঁজে খুঁজে ওদের আঘাত করছে, শেষ করছে। সারাবাংলা এখন হয়ে উঠেছে শয়তানের মৃত্যুফাঁদ। বাংলাদেশের অর্থে কেনা সমরসম্ভার নিঃশেষিত প্রায়। এতদিন যে ধর্মের আফিমের নেশায় বুদ হয়েছিল সারা পাকিস্তানের সুবিধাবাদী জল্লাদ আর দালালের দল, আজ তাদেরও নেশা ভাঙতে শুরু করেছে। জাতীয় সংগ্রামের আগুনের আচে আফিমের নেশাও চড়াৎ করে ভেঙে যাচ্ছে। পাঞ্জাবী মহাপ্রভূদের মনোরঞ্জনার্থে আর অস্ত্র ধরতে রাজী নয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অনেকেই। আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জবানবন্দীতে একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে। এবার দিন গুণবার পালা সামরিক জান্তার এবং তাদের চেলাচামুণ্ডা মওদুদী, ভুট্টো, কাইয়ুম খান, নুরুল আমিন, মাহমুদ আলী প্রমুখের। নিয়াজী বাংলার মাটিতে বসে ইয়ানফসী, ইয়ানফসী শুরু করেছে। ঢাকা বেতার তবু আজো প্ৰলাপ বকছে। ওদেরই কথার প্রতিধ্বনি তুলে নিজেদের বোঝাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু অনুভব ভুলের বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। মুক্তিবাহিনীর মর্টার শেলের আঘাতে এবং মেশিনগানের গুলিতে সচকিত দালালের দল কোন বিবর খুঁজছে? বোমার আঘাতে প্রকম্পিত ঢাকা নগরীতে আজ কি আর বর্বরদের জীবনের উচ্ছলতার কোন অবশিষ্ট আছে? না,