পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

242 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড কাদছে। ঢাকার রেডিও ষ্টেশন পাগলার সেই বধ্যভূমি দূরে নয়, যেখানে হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু, কিশোর ও যুবককে বেয়নেটের খোঁচায় আর রক্ত নিংড়ে নিয়ে ইয়াহিয়ার ঘাতকরা হত্যা করেছে। বধ্যভূমির আকাশে শুধু শকুন আর শকুন। সে বীভৎস নারকীয় হাহিনী জানে ঢাকার প্রতিটি মানুষ, শকুন-ছাওয়া আকাশ সকলে দেখেছে আর শিউরে উঠেছে। কিন্তু শিউরে ওঠেনি ইয়াহিয়ার ভাড়াটে দালালরা। তাই দিনের পর দিন মুক্তিশপথে দৃপ্ত বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের জন্যে মায়াকান্না কাঁদতে কণ্ঠটাও একটু কাঁপে না। কিশোর তরুণ কণ্ঠের চাপা গোঙানি। আরও কান পেতে থাকলে শুনতে পাবে শান্ত বুড়িগঙ্গার প্রাণের অশান্ত চাপা গর্জন। শুনতে পাবে বুড়িগঙ্গার আকাশ, পাগলার বাতাস সারা বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের ডাক দিয়ে বলেছে তোমরা এর প্রতিশোধ নিয়ো, তোমরা এর প্রতিশোধ নিয়ো। সেই চাপা অথচ বজ্রনিৰ্ঘোষ, সেই অবরুদ্ধ লাঞ্ছিত পরাধীন প্রাণের ক্রুদ্ধ হাহাকার যদি তোমরা শুনতে পেতে তাহলে বুঝতে-বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণপ্রাণ শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও কেন জানোয়ার হত্যার শপথ গ্রহণ করেছে। শুনলে বুঝতে পারবে তোমাদের জন্যে শেষ সংবাদে কোন বার্তা অপেক্ষা করছে। (আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী রচিত) বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলার মাটিকে বাংলার আকাশ-বাতাস-মাঠ-প্রান্তরকে এবং বাংলার মানুষকে এমন নিবিড় করে বোধ করি আর কোন বাঙালী ভালোবাসতে পারেনি। বাংলাদেশকে ভালোবেসে, বাংলার নির্যাতিত শোষিত লাঞ্ছিত মানুষকে ভালোবেসে শেখ মুজিবের ন্যায় দুঃখ ও নির্যাতন আর কোন মানুষ সহ্য করেননি। বাংলার মাটির প্রবাহ শেখ মুজিবের রক্তে সৃষ্টি করেছে তরঙ্গ, বাংলার নিঃশ্বাস যেন শেখ মুজিবের নিজের শরীরের নিঃশ্বাসে পরিণত হয়েছে- বাংলার সমগ্র অস্তিত্বের সাথে তিনি যেন একাত্ম হয়ে পড়েছেন। তাই বাংলার শরীরে যখন যে ব্যথা বেজেছে সে ব্যথা যেন শেখ মুজিবের শরীরেও ঝংকার তুলেছে। বাংলার মাটিতে যুগে যুগে মানুষ বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ন্যায় বাংলার প্রাণের সাথে একাত্মতা এমন গভীরভাবে কেউ অনুভব করেননিআর পরবর্তীকালে শুধু বাক্যে নয়, শুধু অনুভূতি দিয়েও নয়, দেহের বিন্দু বিন্দু রক্ত দিয়ে, জীবনের সকল আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে, সকল শক্তি ও সাধনা দিয়ে যিনি বাংলার সাথে একাত্মতা প্রমাণ করেছেন তিনিই বাংলাদেশের নয়নমণি শেখ মুজিব। বাংলার অস্তিত্ব থেকে তাঁর ব্যক্তিত্বকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়।