পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

297 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ১৩। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের | ..... Σ) 5 GHΣ, সাহিত্যানুষ্ঠান থেকে দলিলপত্র বিপন্ন যখন ...অক্টোবর, ১৯৭১ এই অন্ধকার, নিটোল নিশছিদ্র অন্ধকার, অন্তহীন হোক- সে প্রার্থনা করল মনে মনে। আর সেই সুতীব্র অন্ধকারের কামনার সাথে অসাড় হয়ে যাওয়া চেতনা ফিরে আসে নিঃশব্দে, এবং যখন নিজেকে সে আবিষ্কার করল কচুরিপানার ভরা জলাশয়টির এক প্রান্তে। এক গলা জলের মধ্যে মাথায় কচুরিপানা চাপিয়ে কতক্ষণ লুকিয়ে রয়েছে তার নিজেরই মনে নেই। আমার মা, বউ, চার বছর বয়সের ফুটফুটে ছেলেটি- কেউ বেঁচে নেই, নৈঃশব্দের হু-হু ধূসর পটভূমিতে এই সব মনে এল এখন। ছোট ছোট মাছ অথবা জলের পোকা ক্রমাগত তার শরীরের অনাবৃত অংশ ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে একটি তীব্র অনুভূতি, সে ঠিক জানে না তা কি, তার সমস্ত শরীরে ওঠানামা করছে। আস্তে করে কচুরিপানা সরিয়ে সে মাথা তুলল এবং একটি আহত জন্তুর মত ভীত দৃষ্টিতে তাকাল চারপাশে কিছুই চোখে পড়ছে না। অন্ধকার, তার চারপাশে এখন মৃত্যুর মত শীতল অন্ধকার। এবার উঠি, সে ভাবল এবং অশক্ত পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করল। যেহেতু ক্লান্তিতে এখন শরীর ভেঙ্গে পড়ছে, তার পদক্ষেপ সংক্ষিপ্ত এবং এলোমেলো। জলাশয় পেরিয়ে মাঠ, তার পর আম-জাম-কাঁঠালের বাগান। তারপর, কি আশ্চর্য, তেঁতুল গাছের পেছনে উকি মারে মৃত্যুশয্যার বিবর্ণ স্নান চাঁদ। দু'এক পা এগোতে এই প্রথম স্পষ্ট বুঝতে পারল ক্ষিধে পেয়েছে তার, এক্ষুনি কিছু খেতে না পেলে সে বোধ হয় মরে যাবে। সতর্ক চোখে তাকায় চারিদিক, কোন বাসগৃহ চোখে পড়ে না- কোন নিকানো আঙিনা বা অস্পষ্ট কোন আলো রেখা। এ গাঁয়ে বোধ হয় কেউ বেঁচে নেই। আখের ক্ষেতের আশেপাশে লুকিয়ে নেই কোন সতর্ক প্রহরা। সে ভাবলো এবং হুমড়ি খেয়ে পড়ল ফলন্ত ক্ষেতের কিনারে। আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় কয়েকটি আখ ভেঙ্গে নিয়ে একটিতে কামড় বসাল। এখন সে একটার পর একটা আখ চিবিয়ে চলছে। শক্ত খোসায় লেগে একপাশ কেটে গিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই। আখের খোসা ছাড়ান খণ্ডগুলো দাঁতে পিষতে অল্প মিষ্টি অথচ নোনতা তরল পদার্থে মুখের ভেতটা ভরে উঠছে। এখনো পাকেনি, পাক ধরতে সেই আশ্বিন মাস, পুজোর সময়। আর বোধ হয় আমার ক্ষিধে নেই, সে ভাবল এবং আখ চিবানো বন্ধ করল। মাথা ঝিম ঝিম করছে, সমস্ত শরীরে অসহ্য ক্লান্তি এবং ক্রমশ ভারী হয়ে আসা চোখের পাতার সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে অজস্র দৃশ্যাবলী। না, ঘুম আসবে না এখন- কারণ সেই বীভৎস দৃশ্যটি এখনো তার চেতনায় অনির্বাণ। ঘাসের উপর শরীরটা ছেড়ে দিতেই স্মৃতিরা ফিরে এল দ্রুত লয়ে, প্রপাতের মত- তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অতীতের সেই নির্দয় মুহুর্তটির নৈকট্যে। আমার নাম জীবন, জীবন দাস- তার মনে পড়ল। মনে পড়ল বিধবা মাকে, জোয়ান বউ সরমাকে, আর চার বছরের ফুটফুটে বাবুকে। গত পরশু সকালে ওরা বেঁচে ছিল, সুস্থ ছিল, প্রাণবন্ত ছিল। অথচ, কি আশ্চর্য, ওরা এখন নেই। হিংসার জানোয়ারগুলো নিরস্ত্র নিষ্পাপদের গুলি করে মেরেছে। আর আমি, উনত্রিশ